স্যামসাং বনাম হুয়াওয়ে: ফোল্ডেবলে জিতবে কে?
উন্মোচনের এক সপ্তাহ না পেরোতেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়ে গেছে স্যামসাংয়ের ফোল্ডেবল স্মার্টফোন। ২০ ফেব্রুয়ারি ‘গ্যালাক্সি ফোল্ড’ উন্মোচন করে দক্ষিণ কোরীয় টেক জায়ান্ট স্যামসাং। আর ২৪ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে (এমডব্লিউসি) নিজেদের ফোল্ডেবল স্মার্টফোন ‘মেট এক্স’ উন্মোচন করেছে হুয়াওয়ে।
উভয় ফোনই আনফোল্ড করলে ট্যাবলেটের আকার ধারণ করে। দুটো ডিভাইসেই পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। দুটোর দামই আকাশছোঁয়া। উন্মোচন করা হলেও কোনোটিই এখনো বাজারে আসেনি। গ্রাহকদের ফোন দুটো হাতে পেতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। গ্যালাক্সি ফোল্ড ও মেট এক্স-এর মধ্যে মিল বলতে এটুকুই।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ডিভাইস বিক্রির দিক থেকে স্যামসাং ও হুয়াওয়ে পরস্পরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। শীর্ষে থাকা স্যামসাংকে টেক্কা দিতে হুয়াওয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফোল্ডেবল স্মার্টফোন উন্মোচনের ক্ষেত্রেও এ ধারার ব্যতিক্রম হয়নি। নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনে অনন্য ফিচার যোগ করার মাধ্যমে দুটি কোম্পানিই একে অপরকে ছাড়িয়ে যেতে চাইছে। ফলে গ্যালাক্সি ফোল্ড ও মেট এক্স-এর মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
স্মার্টফোনের ফিচারের মধ্যে যে বিষয়টি প্রথমেই আসে, তা হলো ডিসপ্লে। এতদিন বিভিন্ন স্মার্টফোনের ডিসপ্লের মধ্যে তুলনা করা হতো পর্দার আকার, রেজল্যুশন অথবা ডিসপ্লে প্যানেলের ধরনের (এলইডি, ওএলইডি, অ্যামোলেড ইত্যাদি) ভিত্তিতে। ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় যোগ হয়েছে- ডিসপ্লের অবস্থান ও সংখ্যা।
স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি ফোল্ড অনেকটা বইয়ের মতো। এর ভাঁজ খুললে বড় একটি ডিসপ্লে উন্মুক্ত হয়। বাইরের অংশ দুটি ‘কভার’ হিসেবে কাজ করে। অবশ্য এ দুটি কভারের একটিতে আরেকটি ডিসপ্লে রয়েছে।
মেট এক্স-এর ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরোপুরি উল্টো। এর দুটি ডিসপ্লে বাইরের দিকে। ভাঁজ খুললে সেগুলো একটি সিঙ্গেল ডিসপ্লের আকার ধারণ করে। অর্থাৎ মেট এক্স-এর একটি ডিভাইসে তিনটি পর্দার সুবিধা পাওয়া যাবে।
ডিভাইস দুটির ডিসপ্লের আকারেও পার্থক্য রয়েছে। গ্যালাক্সি ফোল্ড-এর বাইরের কভারে সংযুক্ত ডিসপ্লের আকার ৬ দশমিক ৪ ইঞ্চি। আর ভাঁজ খুললে পাওয়া যাবে ৭ দশমিক ৩ ইঞ্চির পর্দা। মেট এক্স-এর ক্ষেত্রে আনফোল্ড অবস্থায় ডিসপ্লের আকার দাঁড়াবে ৮ ইঞ্চি। আর ফোল্ডেড অবস্থায় সামনে ও পেছনে পাওয়া যাবে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬ ইঞ্চি ও ৬ দশমিক ৩৮ ইঞ্চির পর্দা।
এবার আসা যাক নচ-এর প্রসঙ্গে। গ্যালাক্সি ফোল্ডে ৭ দশমিক ৩ ইঞ্চি পর্দার সঙ্গে থাকছে প্রশস্ত আইব্রো নচ, যেখানে দুটি ক্যামেরা ও সেন্সর বসানো হয়েছে। আর মেট এক্স-এর ৮ ইঞ্চির ডিসপ্লে নচবিহীন। তবে এর পেছনের দিকে একটি স্ট্রিপ রয়েছে, যেখানে ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছে। এছাড়া রয়েছে একটি বাঁকানো ‘উইং’, যা ডিভাইসটি ধরে রাখতে ও এক হাতে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।
স্মার্টফোনের ফিচারের কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবেই চলে আসে ক্যামেরার প্রসঙ্গ। স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ড-এ রয়েছে মোট ছয়টি ক্যামেরা- তিনটি পেছনে, দুটি সামনে ও একটি কভার প্যানেলে। হুয়াওয়ে মেট এক্স-এ ক্যামেরার সংখ্যা চারটি (যদিও প্রাথমিকভাবে উন্মোচিত ডিভাইসে তিনটি ক্যামেরা দেখা গেছে। তবে কোম্পানির কনজিউমার ডিভিশনের সিইও রিচার্ড ইয়ু নিশ্চিত করেছেন, আগামী মাসে চার ক্যামেরার মেট এক্স উন্মোচন করা হবে)।
হুয়াওয়ে মেট এক্স কেবল ফাইভজি নেটওয়ার্ক সমর্থন করবে। অন্যদিকে স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ড ফোরজি ও ফাইভজি দুটো অপশনেই পাওয়া যাবে।
ডিভাইস দুটির ইউনিক ফিচার তো জানা হলো, এবার দামের প্রসঙ্গে আসা যাক। দুটো স্মার্টফোন কিনতেই গ্রাহকদের মোটা অংকের অর্থ গুনতে হবে। গ্যালাক্সি ফোল্ড এক্সের সম্ভাব্য দাম বলা হচ্ছে ১ হাজার ৯৮০ ডলার। আর হুয়াওয়ে মেট এক্স কিনতে খরচ হবে আরো বেশি; ২ হাজার ৬০০ ডলারের মতো।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ফোল্ডেবল স্মার্টফোন উন্মোচন তো হলো, কিন্তু গ্রাহকরা এখনই ডিভাইসগুলো হাতে পাচ্ছেন না। স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ড আগামী ২৬ এপ্রিল নির্দিষ্ট কয়েকটি বাজারে ছাড়া হবে। আর হুয়াওয়ে মেট এক্স বাজারে আসতে জুন-জুলাই পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
কয়েক বছরের বিরতির পর মোবাইল ডিভাইসকেন্দ্রিক চমকপ্রদ উদ্ভাবন দেখা গেল। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই কোম্পানির কোন ডিভাইসটি গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে উদ্ভাবনের দিক থেকে দুটি কোম্পানিই যে চমক দেখিয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।