মাছে কমবে বিষণ্নতা
ইউরোপের বিগত বছরগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন মাছ খায়, তারা অন্যদের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম বিষণ্নতায় ভোগে। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, যারা প্রচুর মাছ খায়, তাদের মধ্যে পুরুষের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ও নারীর ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশের বিষণ্নতা কমেছে
প্রোটিনজাতীয় খাবারের মধ্যে আমাদের খাদ্যতালিকায় প্রায় রোজই যে খাবারটি থাকে, তা হলো মাছ। মাছ ছাড়া বাঙালির ভোজন যেন অসম্পূর্ণ। একইভাবে এ খাবারটি কারো কারো অপছন্দ। অন্যান্য বিকল্প থেকেই তারা মেটান প্রোটিনের চাহিদা। সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যারা প্রচুর মাছ খান, তাদের বিষণ্নতার হার অন্যদের তুলনায় কম। এককথায় বলতে গেলে, মাছ খেলে বিষণ্নতা কমে। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
ইউরোপের বিগত বছরগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন মাছ খান, তারা অন্যদের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম বিষণ্নতায় ভোগেন। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, যারা প্রচুর মাছ খান, তাদের মধ্যে পুরুষদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ও নারীদের ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ বিষণ্নতা কমেছে। অনলাইন জার্নাল অব এপিডেমিওলজি ও কমিউনিটি হেলথে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মানসিক সুস্থতার সঙ্গে মাছের একটি যোগসংযোগ রয়েছে। খাদ্যতালিকায় মাছ রেখে প্রাথমিকভাবে বিষণ্নতা কমানো সম্ভব। তবে পরবর্তী গবেষণাগুলোয় দেখা হবে মাছের ধরন অনুযায়ী কার্যকারিতা কেমন।
অন্যদিকে ন্যাচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, গুরুতর সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা মাছের তেল খাওয়ার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
এ গবেষণায় ১৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী কিছু ব্যক্তির ওপর একটি পরীক্ষা করা হয়। তাদের সবার মধ্যেই সিজোফ্রেনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ ছিল। আক্রান্ত ব্যক্তিদের দুটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দলটিকে মাছের তেল সেবন ও দ্বিতীয় দলটিকে মানসিক আরোগ্য লাভে নিরাময়ক পিল দেয়া হয়। সাত বছর পর দেখা যায়, যারা মাছের তেল সেবন করেছেন, তাদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ ব্যক্তির মধ্যে সিজোফ্রেনিয়ার বিকাশ ঘটেছে।
এরপর অন্য একটি গবেষণায় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী দেখেছেন, মস্তিষ্ককে অ্যালঝেইমার্স বা স্মৃতিভ্রংশতা ও অন্যান্য মানসিক ব্যাধি থেকে নিরাপদ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা হলো সবচেয়ে ভালো উপায়। এ গবেষণা দলটি পরবর্তীতে এসব মানসিক রোগের ঝুঁকি এড়াতে স্যামন ও সার্ডিনের মতো ওমেগা-৩ সম্পন্ন চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসম্পন্ন মাছ খেতে বলার কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করেন, তারা হতাশা ও অ্যাংজাইটির সমস্যায় কম ভোগেন। আবার এটাও দেখা গেছে, স্ট্রেস বা অ্যাংজাইটির সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সম্পূরক গ্রহণের পর অনেকটা ভালো বোধ করছেন। এসব ছাড়াও এ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করলে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ঘটার ঝুঁকি এড়ানো যায়। তাছাড়া যাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে, তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতেও সহায়তা করে ফ্যাটি অ্যাসিড।
সূত্র: মেডিকেল ডেইলি ও হেলথলাইন