বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যেতে চায় ইইউ
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে টারিঙ্ক বলেছেন, ইইউ পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে চায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পারস্পরিক স্বার্থে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে চাই।’ এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
টারিঙ্ক বলেন, ‘ইইউ বাংলাদেশের বৃহত্তম রফতানি গন্তব্যস্থল। দু’পক্ষই এ থেকে লাভবান হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।’ শিক্ষা খাতে ইইউকে বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ সহযোগিতাও আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।
জার্মান রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসামান্য উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তাই দেশের উন্নয়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই ২১ বছর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সামরিক একনায়করা দেশ শাসন করেছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের দ্রুত উন্নয়নে বেসরকারি খাতের সবকিছুই উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। গত সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, গত দশ বছরে দেশের উন্নয়নের কারণে জনগণ বিশেষ করে মহিলা ও তরুণরা ব্যাপকভাবে ভোট দেয়ায় আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। তিনি বলেন, জনগণ দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় বলেই আমরা পুনঃনির্বাচিত হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা থেকেই দৃশ্যমান হয়েছে যে, দলটি নির্বাচনে আগ্রহী ছিল না।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির উপর বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি- জামায়াতের শাসনামলে হিন্দুরা ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হয়েছিল। জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার সাথে দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা যৌথ উদ্যোগে করা যেতে পারে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তাঁর জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্লেক।
বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী রেলওয়ে খাতে যুক্তরাজ্যের ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে উল্লেখ করে পদ্মা সেতু থেকে পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে যুক্তরাজ্যের সহায়তা কামনা করেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম দিকে নারীর ক্ষমতায়ন তাঁর সরকারের জন্য খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা সাবলীলভাবেই চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হাইকমিশনার এলিসন ব্লেক দুইদেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এই সম্পর্ক আগামিদিন গুলোতে আরও মজবুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
ব্রিটিশ হাই কমিশনার বলেন, তার দেশ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে লন্ডনে গিয়ে পৌঁছেন এবং তৎকালিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সাথে বৈঠক করেন। উভয় বৈঠককালেই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।