নারী সমাজকে নিজেদেরই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
সিনিয়র রিপোর্টার,
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে সমাজের সর্বস্তরে পুরুষের পাশাপাশি তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নারী সমাজকে নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে নিজেদেরই সক্ষমতা অর্জনের আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যদিও ক্ষমতা দিয়েছি (স্থানীয় সরকারে) তবুও তারা সব জায়গায় ক্ষমতাটি প্রয়োগ করতে পারেন না। যারা দায়িত্বে আছেন (স্থানীয় সরকারে) তাদের নিজেদের ক্ষমতাটা নিজেদের অর্জন করে নিতে হবে। কেউ (ক্ষমতা) কখনও হাতে তুলে দেয় না, এটা হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার আইনে আমরা এক তৃতীয়াংশ নারী আসনের ব্যবস্থা করেছি। ইউনিয়ন এবং উপজেলাসহ সব জায়গায় একজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি মিয়া সেপো বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখত হবে- শুধু আইন করলেই নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বৈষম্য দূর হবে না। এজন্য সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে দরকার। এক্ষেত্রে আমাদের সকলের মা-বোনেরা যেখানে যারা আছেন সকলকেই এক হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, একটা সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয় আর সেই সমাজের যেখানে অর্ধেকই নারী, তাদেরকে বাদ রেখে একটা সমাজ কখনও গড়ে উঠতে পারে না। কাজেই সেক্ষেত্রে সকলকে এক হয়ে কাজ করা- এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন।
শিশু এবং নারী ধর্ষণকে অত্যন্ত গর্হিত একটি অপরাধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় ধর্ষিতা নারীর পরিচয় গোপন রেখে ধর্ষণকারিকে সমাজের সকলের কাছে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, যারা (ধর্ষণ) করে তাদের প্রতি ঘৃণা এবং আমি বলবো তাদের নাম, পরিচয় ভালভাবে প্রচার করা কর্তব্য, যাতে করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। তাছাড়া আইগত ব্যবস্থাতো তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবেই।
এ সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে তাঁর সরকার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘এটা কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, উন্নত সভ্য দেশেও এই সমস্যা রয়েছে। কাজেই এর বিরুদ্ধে আরো জনমত সৃষ্টি করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কন্যা শিশুরা যেন কোনভাবেই বৈষম্যের শিকার না হয় সেই সচেতনতাটা আমাদের সমাজে ইতোমধ্যেই এসে গেছে। আর আমি এটাই মনে করি সমাজকে গড়ে তুলতে হলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই একান্তভাবে কাজ করা দরকার।
‘বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চিরকল্যাণ কর, অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর,
কাজী নজরুলের কবিতার এই পংক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সমঅধিকার সেই অধিকারের কথা তিনি স্পষ্টভাবে বলে গেছেন। কাজেই সমাজ ও দেশেকে কল্যাণময় করতে হলে নারী-পুরুষের একসঙ্গে কাজ করাটা জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা এখন সব জায়গায় এগিয়ে গেছে। চাকরি-বাকরি, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে। এমনকি আমাদের মেয়েরা এভারেস্টও জয় করে ফেলেছে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে এখন অনেক নারী কাজ করেন। এমনিতে নারী পাইলট আছেন। আগামীতে নারীরা বিমান বাহিনীতে ফাইটার জেট চালাবে।
৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনিই সেনাবাহিনীতে প্রথম নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমি প্রথম কয়েকজন নারীকে সচিবের পদমর্যাদা দেই।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা নারীদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা প্রথম যে সংবিধান দিলেন সেখানে তিনি মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত নারী আসন দেন। তিনি মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন- ‘একজন মেয়ে যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন করে তাহলে সমাজে তার ভালো অবস্থান হয়।’ ‘আগে জুডিশিয়াল সার্ভিসে কোনো নারীর চাকরির সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধু এই আইন বাতিল করে দিয়েছেন’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান নাজমুন আরাকে জেলা জজের পদ থেকে হাইকোর্টে পদায়ন করার তথ্যও জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জেলা ডিসি, এসপির পদে মেয়েদের বাধা ছিল। এরপর আমি যাকে প্রথম নারী এসপি করে মুন্সীগঞ্জে আনলাম। তিনি দায়িত্ব নিয়েই ডাকাত ধরে ফেললেন। তার এ কাজের সঙ্গে আমিও জয়ী হয়ে গেলাম।’ নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ এবং পারিবারিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে তাঁর সরকার কঠোর শাস্তির বিধান রেখে ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩ প্রনয়ন করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি এ সময় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে তাঁর সরকারের ডিএনএ আইন-২০১৪, বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭, যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮ প্রণয়ন এবং একই সঙ্গে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এর সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর তফসিলভুক্ত করণের উল্লেখ করেন।