ভোলায় ৪০০ বস্তা চাল সহ ট্রাক আটক
স্টাফ রিপোর্টার
ভোলায় পাচারকালে একটি ট্রাকসহ সরকারি আবাসনের ৪০০ বস্তা (২০ মেট্রিক টন) চাল জব্দ করেছে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাট থেকে এ চাল জব্দ করা হয়।
জব্দকৃত চাল দৌলতখান উপজেলার মদনপুর গুচ্ছ গ্রামের নামে বরাদ্দ। চালগুলো ভোলায় বিলি না করে চোরাই পথে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তবে সারা দিন পার হলেও রাত পর্যন্ত এ চালের বস্তার কোনো সঠিক মালিক পাওয়া যায়নি। চালানে যার নাম রয়েছে, তিনিও তার চাল নয় বলে দাবি করেছেন।
জব্দ ট্রাকে থাকা মেসার্স শাহবাজপুর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির একটি চালানে দেখা যায়, কুষ্টিয়া-ট ১১-১৯৭২ নামের ট্রাকে করে ড্রাইভার রুবেল দৌলতখান উপজেলার আলমগীর মিয়ার কাছ থেকে ২০ মেট্রিকটন (৪০০ বস্তা) চাল সাতক্ষীরার ত্রিশ মাইল এলাকার কাজী বসারত হোসেনের রাবিক অটো রাইস মিলে পৌঁছে দেয়ার কথা লেখা রয়েছে।
চালানের সঙ্গে থাকা খাদ্য অধিদপ্তরের একটি বিলি আদেশ (ডিও)-এর মাধ্যমে জানা যায়, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের ৬৮.৭৪০ মেট্রিকটন চাল গত ৩১ জানুয়ারি অনুমোদন করেন দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ মজুমদার। ইউনিয়নের চর মুন্সি কোয়েল ডি-১ গুচ্ছ গ্রামের সিপিসি (ক্রেতা) মদনপুরের ইউপি সদস্য বেনু আমিনের নামে চালগুলো ইস্যু করা হয়েছে। দৌলতখান খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শান্তি রঞ্জন দাস গুচ্ছ গ্রামের কাজ পরিচালনার জন্য এ চালগুলো ৩১-১-২০১৯ ইং তারিখে বিতরণ দেখান।
কিন্তু চালগুলো ওই তারিখে বিতরণ না করে আজ ৮ মার্চ শুক্রবার ৩টি ট্রাকে করে সাতক্ষীরার ত্রিশ মাইলের রাকিব অটো রাইস মিলে পাচার করা হচ্ছিল। ট্রাক তিনটি ভোলার ভেদুরিয়া ফেরীঘাট দিয়ে যাওয়ার সময় ভোলার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাওছার আহমেদ ও ভোলা সদর থানা পুলিশের একটি টিম চাল ভর্তি একটি ট্রাক জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপর দুইটি ট্রাক চাল নিয়ে ফেরি পাড় হয়ে চলে যায়। সরকারের আইন অনুযায়ী প্রতি জেলার চাল স্ব-স্ব এলাকায় বিতরণের কথা থাকলেও একটি কুচক্রি মহল দীর্ঘদিন যাবৎ আবাসনের চাল কম দরে ক্রয় করে ভোলার বাহিরে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট।
এ ব্যাপারে চাল ব্যবসায়ী মো. আলমগীর মিয়া চালগুলো তার নয় দাবি করেন বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিচুই জানি না। কেউ আমার নাম দিয়ে চালগুলো পাচার করছিল।
তবে এর আগে গত বছর চাল ব্যবসায়ী আলমগীর মিয়া দৌলতখান আবাসনের তিন ট্রাক চাল ভোলার বাইরে পাচারকালে পুলিশ হাতেনাতে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে আলমগীর মিয়া ভবিষ্যতে ভোলার বাইরে চাল পাচার না করার মুচলেকা দিয়ে সে চালগুলো দৌলতখান খাদ্য গুদামে ফেরৎ পাঠান।
আবাসনের সিপিসি ইউপি সদস্য বেনু আমিন বলেন, আমি চাল ক্রয় করার পর গুদামের কাজ শুরু হওয়ায় চালগুলো আনতে পারিনি। চালগুলো কি করছেন তাকে এ প্রশ্ন করায় পরে কথা বলবে বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ মজুমদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আবাসনের কাজের জন্য চাল দেয়া হলেও চালগুলো তারা বিতরণ না করে অন্যত্র বিক্রি করেছে। এটা সম্পূর্ণ অন্যায় কাজ।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, আমরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ পাঠিয়ে চালগুলো ট্রাকসহ জব্দ করেছি। চালগুলো যে আবাসনের এটা প্রথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।