আইসিডিডিআর,বি’র স্থানীয়ভাবে দ্রুত কলেরা রোগ নির্ণয় পদ্ধতির উদ্ভাবন
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়ারিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর বিজ্ঞানীরা স্থানীয়ভাবে দ্রুত কলেরা রোগ নির্ণয় পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছে। বিজ্ঞানীরা রোগ নির্ণয় পদ্ধতির অংশ হিসেবে স্থানীয়ভাবে কলকিট নামের একটি ডিপস্টিক তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বে কলেরা রোগ সংক্রমণের শুরুতে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে তা সনাক্ত করার লক্ষ্যে আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানীরা ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সাথে যৌথ উদ্যোগে এই ডিপস্টিক তৈরি করেছে।
তিন বছর ধরে কঠোর নিয়ন্ত্রিত গবেষণা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার শেষে সাশ্রয়ী এই দ্রুত রোগ নির্ণয় পরীক্ষাটি (আরডিটি) এধরণের পরীক্ষা পদ্ধতির সকল চাহিদা ও দিক-নির্দেশনা পূরণ করেছে বলে আইসিডিডিআর,বি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আইসিডিডিআর,বি’র সংক্রামক রোগ বিভাগের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী কলকিট তৈরীর কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় যে, এই অঞ্চল থেকেই বিশ্বের সাতটি মহামারীর সবগুলোর বিস্তার ঘটেছে। কলেরা রোগের দ্রুত সনাক্তকরণের ওপর এ রোগের ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে। বর্তমানে কলেরা সনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে গবেষণাগারে মলের কালচার পরীক্ষার পাশাপাশি আমদানিকৃত দ্রুত রোগ নির্ণয় কিট ব্যবহৃত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন একটি আরডিটি কলকিট রয়েছে, যা দেশের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করবে এবং ভবিষ্যতে কলেরার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোয় রপ্তানির সুযোগ তৈরি করবে। এর মধ্য দিয়ে প্রাচীন এই রোগের মোকাবেলা এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কলেরা প্রতিরোধক উপকরণ, যেমন কলেরা টিকা এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় করার কিট-এর মাধ্যমে সম্ভব হবে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কলকিট আরডিটি মলে ভিব্রিও কলেরি চিহ্নিত করতে সক্ষম। এটি এমন একটি ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক ডিপস্টিক পরীক্ষা পদ্ধতি, যা মলের নমুনাযুক্ত টিউবের মধ্যে ডুবালে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের মধ্যে যথাযথ ফলাফল (খালি চোখে দৃশ্যমান রঙ্গীন ব্যান্ড) প্রদর্শন করে।
কলকিটের গবেষণাগার ও মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষা-সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ সম্প্রতি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লস নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজিজেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায় যে, মাঠ পর্যায়ে ভিব্রিও কলেরি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কলকিটের সংবেদনশীলতা ও নির্দিষ্টতা বিদেশী আরডিটি’র অনুরূপ। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মোট ৭ হাজার ৭২০ জন রোগীর মলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যেখানে দেখা গেছে, কলকিটের সংবেদনশীলতা শতকরা ৭৬ ভাগ ও নির্দিষ্টতা শতকরা ৯০ ভাগ এবং অন্যান্য প্রচলিত আরডিটি’র ক্ষেত্রে এগুলো ছিলো যথাক্রমে শতকরা ৭২ ও ৮৬.৮ ভাগ।
কলেরা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট মান হলো, গবেষণাগারে মল কালচার পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ, যা নমুনা তৈরি, পরিবহনে বিলম্ব, দক্ষ কর্মী, সময় (২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা) এবং ব্যয়ের (নমুনা প্রতি ৬ থেকে ৮ মার্কিন ডলার) মতো বিষয়ের প্রতি সংবেদনশীল।
আইসিডিডিআর,বি এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর যৌথ ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে ইনসেপ্টা কর্তৃক উৎপাদিত কলকিট বাংলাদেশের ২২টি কলেরা জরিপ সাইটে ব্যবহৃত হচ্ছে।