চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে : তথ্যমন্ত্রী
চট্রোগ্রাম প্রতিনিধি,
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উন্নয়ন পরিকল্পনার সময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে পরিবেশ বিজ্ঞানী হাছান মাহমুদ বলেন, ক্যাম্পাসে যে কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ডের আগে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটকে বিবেচনায় রাখতে হবে। রসায়ন বিভাগের সাবেক ছাত্র হাছান মাহমুদ আজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ‘তারা’ কিভাবে জিতেছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন যারা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলো, তারাও-তো ভিপিসহ অন্যান্য পদে জিতেছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন যারা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলো, তারাও-তো ভিপিসহ অন্যান্য পদে জিতেছে। আমার প্রশ্ন, ডাকসুর নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে তারা জিতলো কীভাবে ?
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকদিন আগে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। সেখানকার প্রশাসন কিছু ত্রুটির কথা স্বীকার করেছে। সেটি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। যারা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল তারাও-তো জয়লাভ করলো।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নেতৃত্বের বিকাশের জন্য ছাত্র সংসদের কোনো বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন নির্বাচন হয়, তখন আমি ছাত্র না। এরপরও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। এগুলো নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক। আমি আশা করবো, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও শিগগিরই চাকসুর নির্বাচন হবে।’
গবেষণা ও প্রকাশনার মাধ্যমে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশ ঘটে মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে ছাত্ররা কেউ কম্পিউটার সায়েন্স, কেউ ব্যবসা প্রশাসন, আর কেউ আইন বিষয়ে পড়তে চায়। বিজ্ঞানের ছাত্র হতে চায় কম। এ জন্য এখন গবেষণা কমে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণ করে গবেষণার উপর উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সময়ে বাবারা ভালো ছাত্রদের রসায়ন, পদার্থ এগুলোই পড়াতেন। গবেষণার উপর বিশেষ করে রসায়ন বিভাগের আরো জোর দেয়া প্রয়োজন। গবেষণার জন্য আরো ফান্ড সরকারের কাছে চাওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যার উপর রেটিং হয়না। গবেষণার মাধ্যমে একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য উচ্চতায় যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে এতো গবেষণা হয়, সেখান থেকে এ পর্যন্ত ৩৪ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। আমি মনে করি, রসায়ন পড়ার পর চাকরির অনেক সুযোগ রয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আশি’র দশকে মালয়েশিয়ার ছাত্ররা আমাদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসতো। এখন আমাদের ছেলেরা সেখানে পড়তে যায়। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছতো বাংলাদেশ। এরপরও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে সব সূচকে পাকিস্তান থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।’
দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১০ বছর আগে যে ছেলে বিদেশ গেছে, সে ছেলে দেশে এসে তার শহর ও গ্রাম চিনতে পারে না। কারণ সবকিছুতে উন্নয়ন হয়েছে, আগের চিত্র বদলে গেছে। এ পরিবর্তন শেখ হাসিনার কারণে হয়েছে।
চবিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে যেন প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমেরিকান কর্নেল ইউনিভার্সিটির মিল রয়েছে। ওই ইউনিভার্সিটিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড়। এখানকার মতো সেখানেও পাহাড় ও প্রচুর গাছপালা আছে। দেশের অন্য কোনো ক্যাম্পাস প্রাকৃতিকভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এতো সুন্দর নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পার হয়েছে। আরও শত শত বছর টিকে থাকবে। এই প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন, যে কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করার ক্ষেত্রে যেনো প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে করা হয়।
তথ্যমন্ত্রীর পুরো বক্তৃতায় ছিল তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ, শিক্ষক ও ঘনিষ্ঠ সহপাঠীদের গল্প। এসময় তিনি কয়েকজন প্রিয় শিক্ষক ও সহপাঠীদের স্মরণ করেন, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।
দু’দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য সূবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মূখ্য সচিব মো. আবদুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. শিরীন আখতার, চবি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সফিউল আলম, সুবর্ণ জয়ন্তী আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মনির উদ্দিন।
নিজ ক্যাম্পাসে পা রেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তথ্যমন্ত্রী। ৩২ বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বেরিয়েছিলেন আজকের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একসময় যিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তিনি আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন প্রধান অতিথি হয়ে। তাই স্বভাবতই রসায়ন বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন তথ্যমন্ত্রী।
কড়া নাড়েন স্মৃতির দরজায়। তাঁর মুখ থেকে এক এক করে বেরিয়ে আসতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন অনেক স্মৃতি, না জানা গল্প।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অনেক ব্যস্ততা সত্ত্বেও আমি এখানে উপস্থিত হওয়ায় আয়োজকরা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আমি তাদের বলবো, আমার দাপ্তরিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় কর্মব্যস্ততা আছে বটে। এরপরও আমি বলবো, আমার প্রাণের ক্যাম্পাস, ভালোবাসার ক্যাম্পাস আমার কাছে সর্বাগ্রে। তাই এখানে আসার জন্য আমি নিজেই উদগ্রীব ছিলাম, ব্যাকুল ছিলাম।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগেও সরকারের মন্ত্রী থাকাকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আসা হয়েছে।