স্বাধীনতা বিরোধী খুনী চক্র যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

জিল্লুর রহমান,

ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অশুভ চক্রের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে আবারো সতর্ক করে বলেছেন, স্বাধীনতা বিরোধী, খুনী, সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদী চক্র আর কখনই যেন দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত না হতে পারে। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার এই জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের মানুষের কাছে আমার একটাই আহবান, আর যেন এই বাংলার মাটিতে ঐ স্বাধীনতা বিরোধী, খুনী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, অস্ত্র চোরাকারবারী,এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী- এরা যেন আর কোনদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতাকে আমাদের সমুন্নত রেখে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা তা করতে পারবো, সে বিশ্বাস আমাদের আছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। এই শতবর্ষ উদযাপনে কমিটি করেছি। আমি চাই সারা বাংলাদেশে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জেলায় এখন থেকেই সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে। জাতির পিতার এই জন্মদিন থেকেই শুরু হবে জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করার প্রস্তুতি। এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশে জনগণের অধিকার সমুন্নত হবে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে- এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, দলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহবুব-উল- আলম হানিফ, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সভায় বক্তৃতা করেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা, ত্রাণ এবং কল্যাণ সম্পাদক সুজীত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এমপি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বক্তৃতা করেন।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির মনে জাতির পিতা স্বাধীনতার আকাঙ্খা সৃষ্টি করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি একটি জাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। নির্যাতিত বাঙালির মনে স্বাধীনতার আকাঙ্খা সৃষ্টি করেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। বাঙালি জাতি নির্যাতন-নিপীড়ন সইতে গিয়ে তাদের অধিকারের কথা যেন ভুলেই গিয়েছিল, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ একবেলা খাদ্য জোগাড় করতে পারতো না, উল্টো নির্যাতিত হতো। এ নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগও ছিলো না বরং এটাকেই আল্লাহর বিধান বলে তারা মেনে নিতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা সেই মানুষগুলোর মধ্যে ধীরে ধীরে সাহস দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি যুদ্ধ করার মানসিকতা তৈরি করে দিয়েছিলেন। তিনি শোষণ-বঞ্চনা থেকে জাতিকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন।’

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি আন্দোলনে জন্য জাতির পিতার কারা নির্যাতন ভোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনেও তাঁর অনেক অবদান। ১৯৪৮ সালে ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়েই বারবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। ’৪৯ সালে গ্রেফতার হন। বায়ান্ন সালে গুলি চললো, ভাষা শহীদরা প্রাণ দিলেন। অনেকেই এ আন্দোলনকে সেখানেই থামিয়ে দিলেও প্রকৃত আন্দোলন তখনো শেষ হয়নি। জাতির পিতা জেল থেকে বেরিয়ে সেই আন্দোলন আবারও চালাতে থাকেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য যেমন তিনি (জাতির পিতা) সংগ্রাম করেন পরবর্তী সময়ে তাদের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার সংগ্রামও তিনিই শুরু করেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, ভাষা আন্দোলনে তার যে অবদান তা আমাদের জ্ঞানী-গুণীরাও তাদের লেখায় উল্লেখ করতেন না।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার নিয়মিত প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিতব্য ১৪ খন্ডের সিক্রেট ডকুমেন্টস অন ফাদার অফ দি নেশন্স’র সবগুলো খন্ড প্রকাশিত হলে এ সম্পর্কে দেশবাসী আরো জানতে পারবে উল্লেখ করে শীঘ্রই ১৯৫৩ সালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত এর তৃতীয় খন্ড প্রকাশিত হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী এদিনের ভাষণে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতার অসামান্য ভূমিকার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য যে, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন, তাও উল্লেখ করেন।
তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করায় জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করার পাশাপাশি ’৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশকে শাসনকারী স্বৈরশাসকদের স্বরূপ উন্মোচন করেন এবং তাদের সমর্থনকারী দেশের তথাকথিত সুবিধাভোগী এলিট শ্রেণীরও কঠোর সমালোচনা করেন।

তিনি তথাকথিত সেসব সুধী শ্রেণীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘ভাওতাবাজি দিয়ে অনেক দল সৃষ্টি করতে পারলেই কি বহুদলীয় গণতন্ত্র হয়?’
তিনি বলেন, ‘তার (জিয়ার) বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল একটি ভাঁওতাবাজি। যেখানে কথা বলার অধিকার নেই, মত প্রকাশের অধিকার নেই, সেটা আবার বহুদলীয় গণতন্ত্র হয় কীভাবে! অথচ কিছু জ্ঞানী-গুণী তাকেই বাহবা দিতে শুরু করল।’

দেশে অপরাজনীতি করার জন্যই যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী বিএনপিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্য এবং ক্ষমতায় গেলে কে তাদের প্রধানমন্ত্রী হবে সেটা দেশবাসীর কাছে উপস্থাপনে ব্যর্থ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *