কুড়িগ্রামে ৫টি নদী-খাল পুনঃখননের কার্যক্রম শুরু
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি,
জেলায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়ি তিস্তাসহ জেলার ৫টি নদী-খাল পুনঃখননের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলার আরো ৪৭টি নদী-খালের প্রায় ৩০০কি.মি.পথ পুনঃখনন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে করে বন্যা ও খরার কবল থেকে কৃষকরা রক্ষা পাবার পাশপাশি জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন দেশের ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় নদী ও খাল পুনঃখনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ কর্মসূচি ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান-২১০০’-এর প্রথম পর্যায় এ প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম জেলার ৭টি উপজেলার ৫টি নদীর ৯৮কি.মি. পুনঃখনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এরমধ্যে উলিপুর-চিলমারীর বুড়ি তিস্তা নদী সাড়ে ৩১কি.মি., ভূরুঙ্গামারী-নাগেশ^রীতে ফুলকুমার নদী ৩৬কি.মি., নাগেশ^রীর নেওয়াশি সুখ্যাতি নদীর ৫কি.মি., ফুলবাড়িতে নীলকমল নদী সাড়ে ১৫কি.মি., রাজিবপুর-রৌমারীতে সোনাভরি নদী ১০কি.মি.। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা।
পুনঃখনন কার্যক্রম শেষ হলে দারিদ্রপীড়িত এ জনপদের মানুষজন শুষ্ক মৌসুমে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, নাব্যতা হ্রাস, সেচ সুবিধা, মাছ চাষ ও হাঁস পালন বৃদ্ধি, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠে আসা এবং পরিবেশ রক্ষার ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। নদী না থাকার কারণে ভাল ফসল উৎপাদনে ব্যাহত হবার পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছিল এখানকার কৃষকগণ।
দীর্ঘ ২৫/৩০বছর পূর্বে তিস্তা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে বুড়ি তিস্তা নদীটি উলিপুর-চিলমারী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে মিলিত হয়। কিন্তু এর প্রবেশ মুখে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিলে সময়ের সাথে সাথে বুড়ি তিস্তা নদী মরে যায়। পুনরায় এ নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগে খুশি স্থানীয়রা।
উলিপুরের খামার নাকলেরবাড়ি গ্রামের রমজান আলী বলেন, ‘আগোত পানি আছলো না। আবাদ সুবাদ হয় নাই। এলা আবাদ হইবে।’
বুড়ি তিস্তা পারের মোতালেব মিয়া বলেন, ‘ এলা সারা বছর পানি পামো। মাছও চাষ করমো, হাঁসও পালন করমো।’
কৃষকরা জানান, বুড়ি তিস্তায় পানি না থাকায় শুকনো মৌসুমে সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হতো। এসে সেচের খরচ বেশি লাগতো। এখন পানির স্তর উপরে উঠায় সেচের অনেক সুবিধা হবে পুরো এলাকায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, খননের ফলে বুড়ি তিস্তা নদীর তলদেশ ৪০ফিট এবং উপরিভাগ গড়ে ৬০-৭০ফিট হবে। অন্যা নদী ও খালের গভীরতা বাড়বে। এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ২ হাজার ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৮টি ছোট নদী, ৩৫২টি খাল এবং ৮টি জলাশয় পুনঃখনন কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ডেলটা প্লান ২১০০ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ছোট নদী ও খালের পুনঃখনন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার ১০০ কিলোমিটার নদী-খাল রয়েছে। এ প্রকল্পের কারণে বন্যা বা খরার প্রভাব থেকে কৃষক মুক্তি পাবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাবে।’
কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন বলেন, ‘নদী খনন এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের চাহিদা। আশা করছি এ এলাকার নদী ভাঙন রোধ ও নদী পুনঃখনন কাজের মধ্য দিয়ে এলকার জনগণ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন। বুড়িতিস্তা নদীর খনন কাজ সম্পন্ন হলে বুড়িতিস্তা তিস্তার দু’পাশে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে এবং সেই সাথে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।’