বিশ্বকাপে আমরা কাউকে ভয় পাই না : রশিদ খান
তারেক আহেমদ,
দেরাদুন, এএফপি, আফগানিস্তান স্পিন কিং রশিদ খান বলেছেন, আগামী মে মাসে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে তার দল কাউকে ভয় পায় না।
আফগানিস্তান প্রথম টেস্ট জয়ের পর এ কথা বলেন খান। সংক্ষিপ্ত ভার্সনে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বোলার খান বলেন কেবলমাত্র দ্বিতীয় টেস্টেই আয়ারল্যান্ডকে হারানোর পর আফগানিস্তানের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে।
টি-২০ বোলিং র্যাংকিংয়ের শীর্ষ এবং ৫০ ওভার ফর্মেটের তৃতীয় স্থানে থাকা ২০ বছর বয়সী রশিদের ৮২ রানে ৫ উইকেট শিকারের সুবাদে আরেক নবাগত আয়ারল্যান্ডকে দেরাদুন টেস্টে পরাজিত করে আয়ারল্যান্ড।
আগামী ২৩ মার্চ শুরু হতে যাওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ২০১৯ আসরে সানরাইজার্স হায়দারাবাদের হয়ে ভাল করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী খান বলেন, আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের এখন দরকার কেবলমাত্র আত্মবিশ্বাস।
এএফপি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের মেধা আছে, আমাদের দক্ষতা আছে।’
গত বছরের এশিয়া কাপে ৫০ ওভার ফর্মেটে শক্তিশালী টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকাকে পিছনে ফেলে গ্রুপের শীর্ষ স্থান দখল করেছিল আফগানিস্তান।
-তোমার দক্ষতায় বিশ্বাস রাখো-
এশিয়া কাপ গত আসরে শেষ চার-এর ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের টাই করা আফগান তারকা বলেন, ‘এশিয়া কাপে আমরা পুরোপুরি ভিন্ন ধরনের ক্রিকেট খেলেছি এবং প্রমাণ করেছি আমরা যে কোন দলকে হারাতে পারি।
রশিদ খান বলেন, ‘একমাত্র বিষয় হচ্ছে তোমার দক্ষতায় বিশ্বাস রাখা। বড় ম্যাচে শুধুমাত্র নিরুদ্বেগ থাকো এবং তোমার খেলাটা উপভোগ করো এবং বিশ্বকাপে আমাদের এমন থাকাটাই উচিত হবে।’
যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান ২০০৯ সালে ওয়ানডে এবং ২০১৭ সালে টেস্ট মর্যাদা লাভ করে। তবে দলটির সাম্প্রতিক উত্থান খানকে একজন বিশ্বমানের স্পিনারে পরিণত করেছে।
মাত্র ১৭ বছর বয়নে ২০১৫ সালে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় খানের। তবে বোলার হিসেবে এ উত্থানের জন্য তিনি সমস্ত কৃতিত্ব দিচ্ছেন আইপিএলকে।
তবে কেবলমাত্র আইপিএল নয়, রশিদ এখন অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লীগ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ ও পাকিস্তানের সুপার লীগসহ বিশ্ব জুড়ে টি-২০ লীগ খেলছেন।
তিনি বলেন, ‘ভিন্ন ভিন্ন কোচ এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করা সত্যিই আপনার দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হয়। তাদের ভাবনা ও অভিজ্ঞতা এবং প্রকৃত অর্থেই আপনার খেলার উন্নতিতে সহায়ক হবে।
বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক হওয়ার আগে আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চল নানগাহার প্রদেশে টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট শেখা রশিদ ১২ ভাই-বোনের একজন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম ৪৪ ম্যাচে একশ’ উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করে ক্রিকেট বিশ্বের নজরে আসেন রশিদ।
-আমি নিজের ওপড় চাপ নেই না-
খান বলেন, তার সাফল্যের মূল বিষয় হচ্ছে- তিনি কেবলমাত্র অনুশীলনে নজর দেন এবং নিজের ওপড় কোন চাপ নেন না।
রশিদ খান বলেন, ‘আমি নিজের ওপড় কোন চাপ নেই না, আমি নিজের খেলাটা উপভোগ করার চেষ্টা করি। উইকেট পাই না পাই নিজের বোলিংটা উপভোগ করি। আমার নজর থাকে কাজটি সঠিকভাবে করা এবং ভাল বোলিং করা। আমি ফলের প্রতি নজর দেই না, নজর দেই নিজের কঠোর পরিশ্রমের প্রতি।
পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদির একজন বড় ভক্ত খান জানান, দশ বছর যাবত যুদ্ধ চলা একটা দেশে ক্রিকেট শেখাটা ছিল অত্যন্ত কঠিন।
আফগানিস্তানের অনেক ক্রিকেটারই পাকিস্তান সীমান্তে উদ্বাস্ত শিবিরে ক্রিকেট শিখেছেন। দক্ষতা বাড়াতে নিজের সাত ভাইকে নিয়ে খেলতেন খান।
এক ঝলক হাসি দিয়ে খান বলেন, ‘সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল হওয়ায় এটা ছিল খুবই কঠিন। কোন ভাল মাঠ, সরঞ্জামাদি ছিল না। তবে এখনো আমরা আমাদের ক্রিকেট উপভোগ করি।
‘আমাদের সুযোগ-সুবিধা নেই কিংবা সে রকম সাপোটির্ং স্টাফ নেই-আমরা কখনোই এটা মনে করতাম না, নিজেদের খেলার প্রতি নজর রাখতে চেষ্টা করতাম।
‘আমার ভাইয়েরা ক্রিকেট খেলা দেখত এবং খেলত এবং এভাবেই আমি খেলাটির একজন বড় ভক্ত হয়ে উঠি।
র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা ভারতের বিপক্ষে ২০১৮ সালে আফগানিস্তান তাদের অভিষেক টেস্ট খেলে। মাত্র দুই দিনের মধ্যেই ম্যাচটি হেরে যায় নবাগতরা। তবে এক বছর পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অনেক উন্নত করা দল হিসেবে ফিরে আসে।
খান বলেন, ‘আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এ জয় আমাদের প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণীত করবে। জনগণ টি-২০ ও ওয়ানডের চেয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বেশি ভালবাসতে শুরু করবে।’