দক্ষিণ-দক্ষিণ জ্ঞান ও উদ্ভাবনী কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বাংলাদেশের
স্টাফ রিপোর্টার,
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : জাতিসংঘের দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক ২য় উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে (বাপা+৪০) অংশ নিয়ে দক্ষিণের দেশগুলোর জন্য একটি মন্ত্রী পর্যায়ের ফোরাম এবং ‘দক্ষিণ-দক্ষিণ জ্ঞান ও উদ্ভাবনী কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ারস্-এ অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দেশ পর্যায়ের বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এই প্রস্তাব দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ‘এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ’।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ২০১৫ সালের মে মাসে রাজধানী ঢাকায় প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং দক্ষিণের উন্নয়নে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সাউথ-সাউথ এন্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশনের উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই বাংলাদেশ এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছিল।
‘দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা’কে শক্তিশালী ও পুনরুজ্জ্বীবিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক ২য় উচ্চ পর্যায়ের এই সম্মেলন আহ্বান করে।
১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ারস্ এ অনুষ্ঠিত ‘বুয়েনস আয়ারস্ প্লান অব অ্যাকশান (বাপা)’ গৃহীত হবার চল্লিশ বছর পূর্তির কথা মাথায় রেখেই সাধারণ পরিষদ এবারের এই সম্মেলন অনুষ্ঠান এখানে আয়োজন করেছে।
বাপা+৪০ এর লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে কারিগরি সহযোগিতার বাস্তবায়নকে এগিয়ে নেওয়া। ২০ মার্চ শুরু হওয়া উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ আর্জেন্টিনা। এটি ২২ মার্চ শেষ হবে।
বাংলাদেশ এ সম্মেলনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সম্মেলনটির উচ্চ পর্যায়ের প্লেনারিতে কিছু সময়ের জন্য সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, দক্ষিণের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও এর সম্ভাবনা উন্মোচনের পাশপাশি দক্ষিণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে উন্নয়ন, অর্থ, অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের একটি ফোরাম গঠন করা। এছাড়া তিনি রাজধানী ঢাকায় ‘দক্ষিণ-দক্ষিণ জ্ঞান ও উদ্ভাবনী কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন।
ড. মোমেন বলেন, এই কেন্দ্র সর্বশেষ প্রযুক্তি হস্তান্তর বিশেষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণের দেশগুলোর বিপুল সংখ্যক নাগরিক প্রবাসে বসবাস করছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রবাসী এই নাগরিকরা যাতে তাদের অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও সম্পদ ব্যবহার করে নিজ নিজ দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে সে লক্ষ্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার
আওতায় একটি প্লাটফর্ম গঠন করা যেতে পারে।
দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমার একটি কার্যকর প্রপঞ্চ হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশকে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যম-আয়ের দেশে এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছি। উন্নয়ন অগ্রযাত্রার এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার পূর্ণ সুবিধা ব্যবহার করতে চাই।’
এটুআইসহ বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনায় দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
জাতিসংঘের দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক কার্যালয় প্রকাশিত ‘সর্বোত্তম অনুশীলন’ সংক্রান্ত প্রকাশনায় বাংলাদেশের পাঁচটি বিষয়, যথাক্রমে- ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইমপ্যাথি প্রশিক্ষণ, এসডিজি ট্রাকার, সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড এবং পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারির সময় ব্যয় পরিদর্শন মডেল অন্তর্ভূক্ত করায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।
সিটিজেন ফ্রেন্ডলি পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন ইন বাংলাদেশ বিষয়ক একই কার্যালয়ের আরেকটি প্রকাশনায়ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সাফল্যগাঁথা তুলে ধরা হয়েছে যা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাউথ-সাউথ এন্ড ট্রায়াঙ্গেলার কো-অপারেশনের মাধ্যমে কৌশলগত অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করতে সদস্য দেশগুলোকে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ড. মোমেন।
এর আগে এটুআই ও জাতিসংঘের দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ক একটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইভেন্টটিতে তিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী খাতে বাংলাদেশ সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। বক্তব্যে তিনি উত্তম অনুশীলন, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বিনির্মাণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, শিক্ষা বিনিময় ইত্যাদি কার্যক্রমে দক্ষিণের দেশগুলোর অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির উপর জোর দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মারিয়া ফার্নান্দে এসপেনোসা গার্সেজ, জর্জিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড জালকালিয়ানি এবং গুয়েতেমালার পররাষ্ট্র বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার জাইরো ডি. এসট্রাডা বি. এর সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন।
এ সকল বৈঠকে নিজ নিজ দেশের দৃষ্টিভঙ্গি ও উন্নয়ন প্রচেষ্টাসমূহের নানা দিক তুলে ধরা হয়। সাধারণ পরিষদের সভাপতি বাংলাদেশ অদম্য অগ্রযাত্রা এবং মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।