পর্নোগ্রাফি তৈরির এক চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে তৈরি করা হতো পর্নোগ্রাফি। পরে ছয় মাসের মাথায় দেওয়া হতো ডিভোর্স। বিয়ে করে পর্নোগ্রাফি তৈরির এমন এক চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এই চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় পাঁচজনের বেশি নারী প্রতারিত হয়েছে।
এমনকি তারা বাসায় গিয়ে ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানোর নামে প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক করতো। সেগুলো ভিডিও করে পরবর্তী সময়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করত।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা হলেন- ইয়াসিন আরাফাত ও সাইফুল ইসলাম। এসময় তাদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরির কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ও একটি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে চক্রের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার (সিপিসি-১) মো. কামরুজ্জামান।
কামরুজ্জামান বলেন, ‘চক্রটি মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখাতো এবং শারীরিক সম্পর্ক করত। সেই দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে রাখতো এবং ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরিতে বাধ্য করতো। আবার অনেক মেয়ের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত।’
‘কয়েকজন ভুক্তভোগী এসব তথ্য র্যাবকে জানায়। পরে র্যাব অনুসন্ধানে নামে এবং চক্রের সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যেসব নারীর স্বামী বিদেশ বা ঢাকার বাইরে থাকে তাদের চিহ্নিত করে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতো তারা; আস্তে আস্তে সখ্য গড়ে তুলতো। তারপর মোবাইল নাম্বার যোগাড় করে তাদের সঙ্গে কথা বলত এবং প্রেমের সম্পর্ক করত। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ফ্লাটে নিয়ে যেত এবং শারীরিক সম্পর্ক করে গোপনে ভিডিও করে রাখতো। তারপর ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা আদায় করত।’
প্রাইভেট পড়ানোর নামে শারীরিক সম্পর্কের ফাঁদ
ইয়াসিন আরাফাত ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ইংরেজিতে অনার্স শেষ করে উত্তরখানের সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের দায়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে সোনালী মডেল কিন্ডারগার্টেন নামে একটি স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক হন। সেখান থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর গৃহ শিক্ষকতা শুরু করেন। তার সঙ্গে জ্যেতি নামের এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরে বিয়ের এক বছরের মধ্যে ডিভোর্স দিয়ে দেন।
আরাফাত ছয় মাস আগে এক ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। সম্প্রতি তাকেও ডিভোর্স দিয়ে দেন। যাদের সঙ্গে বিয়ে করতেন তাদের সবার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করতেন। ডিভোর্সের পর তার কাছে নগ্ন ভিডিও আছে দাবি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। অনেক সময় দিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরিতে বাধ্য করা হতো। এ পর্যন্ত তিনি চার-পাঁচজন মেয়েকে বিয়ের ফাঁদে ফেলেছেন।
সাইফুল ইসলাম বরিশাল সরকারি গৌরনিধি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। ঢাকায় দক্ষিণখানের খৈনকুটি আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষক শুরু করেন। ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে ছাত্রীদের বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন।
এসময় ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ছবি স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে আদান-প্রদান করতেন। অনেক সময় ছাত্রীর পরিবারের কেউ বাসায় না থাকলে শারীরিক সম্পর্ক করতেন এবং তা ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন। একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে তার এমন সম্পর্ক ছিল বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন।