ভ্যাটের হার কমানোর উদ্যেগ
সাইদুর রনি,
নতুন ভ্যাট আইন (মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক আইন) বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। আইনটি বাস্তবায়নের আগে কিছু ধারা ও বিধির প্রয়োজনীয় সংশোধনের সুপারিশ এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন পদ্ধতি, ভ্যাট আদায় কিংবা প্রদান পদ্ধতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন।
আগামী জুলাই থেকে আইনটি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা এখনো জানেন না, কোন্ ব্যবসায়ের জন্য কী ধরনের ভ্যাট হার নির্ধারিত হবে। ট্যারিফ পদ্ধতি কিংবা প্যাকেজ ব্যবস্থায় ভ্যাট দেওয়ার সুযোগ থাকবে কিনা – তাও এখনো ঠিক হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে ব্যবসায়ী ও ভ্যাট কর্মকর্তারা এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন। ফলে সঠিকভাবে প্রস্তুতিও নিতে পারছেন না।
সম্প্রতি এ ইস্যুটি তুলে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর। বাজেট নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে এক মধ্যাহ্ন ভোজসভায় তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে কী ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, তা এখনো ব্যবসায়ীদের কাছে পরিষ্কার নয়।
ভ্যাটের ১৫ শতাংশের একক হার না রেখে তা বহু স্তর করার বিষয়টি ইতোমধ্যে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সম্প্রতি তিনি ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১০ শতাংশে আনা হবে বলেও জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভ্যাটের হার হবে পাঁচ, সাত ও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। ভ্যাটের হার কমিয়ে আদায় বাড়াতে চাইছেন তিনি। ইতোমধ্যে এটি এনবিআর কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। অবশ্য অর্থমন্ত্রীর এমন অবস্থানের পর ভোক্তা ও ব্যবসায়ী মহলে স্বস্তি ফিরেছে।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লিগ্যাল ভয়েসকে বলেন, ১৫ শতাংশ থেকে হঠাত্ করে ভ্যাটের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনলে আদায়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হিসাব করে দেখা গেছে, তাতে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট কমতে পারে। এটি এনবিআরের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ রেখে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ পর্যায়ে ১০ শতাংশে আনার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন লিগ্যাল ভয়েসকে বলেন, ভ্যাটের হার কমিয়ে আনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে টার্নওভার ট্যাক্স থাকবে কিনা কিংবা থাকলে তা কত হারে হবে, সম্পূরক শুল্ক উঠে গেলে বা যেখানে শুল্ক নেই, সেক্ষেত্রে ভ্যাটের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, ভ্যাট অব্যাহতির সীমা কত হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্যাকেজ ভ্যাট এবং ট্যারিফ হার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া যেসব ব্যবসায়ী এখনো প্রযুক্তিতে অনগ্রসর, তাদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি। এরকম অনেক কিছুই আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, এফবিসিসিআই একটি মতামত তৈরি করছে। এটি শিগগিরই এনবিআরকে দেওয়া হবে।
২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইনটি পাস করার পর তা ২০১৫ সাল থেকে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু আইনটির কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে আপত্তি তুলে শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে কার্যকরের সব প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার মুখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা দুই বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই হিসেবে আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে আইনটি বাস্তবায়নের আগে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে – তার প্রভাব বিশ্লেষণের দাবি ছিল এফবিসিসিআইয়ের। কিন্তু গত প্রায় দুই বছরেও প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারেনি এনবিআর। অবশ্য আইনটি সংশোধনের লক্ষ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ইতোমধ্যে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাতে ভ্যাটের একাধিক হারসহ বেশকিছু সংশোধনের সুপারিশ করেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে একই প্রতিষ্ঠানের একটি নিবন্ধনের পরিবর্তে ভৌগোলিক বিবেচনায় নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখা, ব্যবসায়ী কর্তৃক মূল্য ঘোষণার অবাধ ছাড়ে রাশ টানা, ৩০ লাখ টাকা টার্নওভার করের অব্যাহতি বাতিল করা, অনলাইন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করাসহ আরো কিছু সংশোধনের সুপারিশ করে কমিটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই সুপারিশের আলোকে সংশোধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এনবিআর। এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লিগ্যাল ভয়েসকে বলেন, আইনটি ২০১২ এর পরিবর্তে ২০১৯ নামেই বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু বাস্তবায়নের আগে যে ধরনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম থাকা দরকার – তা এখনো হয়নি।