সুদের হার কমান সময়মতো ঋণ পরিশোধ করুন—প্রধানমন্ত্রী
গোলাম রব্বানী,
ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনতে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সময়মতো ঋণ ও এর সুদ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল জাতীয় শিল্প মেলা-২০১৯-এর উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার জন্য আমরা ব্যাংক উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। কিন্তু সব ব্যাংক নয়, মাত্র কয়েকটি ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এর আগে সরকারি তহবিলের ৭০ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় রাখা হতো। এ তহবিলের ৩০ শতাংশ রাখা হতো বেসরকারি ব্যাংকে। কিন্তু বর্তমানে উভয় ধরনের ব্যাংকই সমহারে সরকারি তহবিল পাচ্ছে। তার পরও ব্যাংক উদ্যোক্তারা সুদের হার কমাননি। বরং শিল্প স্থাপন করে তারা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সরকার বরং দেখতে পারে ব্যাংক উদ্যোক্তারা যথাযথ নিয়মে ভ্যাট ও শুল্ক প্রদান এবং কাঁচামাল কিনছেন কিনা।
শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহারকে প্রধান বাধা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় ব্যাংকের সুদের হার এক অংকে ছিল। বর্তমানে তা ১৪, ১৫ অথবা ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকঋণের সুদের হার উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) দায়ী করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রেসক্রিপশনের পর সরকার ক্যাপ পদ্ধতি (কম-বেশি সুদহার বেঁধে দেয়া) প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এ সময় ব্যবসায়ীদেরও সময়মতো ঋণ ও এর সুদ পরিশোধের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সপ্তাহব্যাপী ‘জাতীয় শিল্প মেলা-২০১৯’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম। অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। মেলায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে দেশে তৈরি পাটপণ্য, খাদ্য, কৃষিপণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী ও হস্তশিল্প পণ্য প্রদর্শন করছে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নে শিল্পের বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে দেশ-বিদেশে বাজার সৃষ্টির জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। আমাদের শিল্প বহুমুখী করতে হবে। শিল্পোদ্যোক্তাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে দেশে-বিদেশে বাজার সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদেরও এখন চিন্তা করতে হবে নতুনভাবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা কীভাবে শিল্পায়ন ঘটাতে পারি।
কেবল একটা নিয়ে পড়ে থাকা নয়, আমাদের শিল্পায়ন, উৎপাদন, রফতানি ও বাজারজাতকে বহুমুখী করতে হবে। আমাদের রফতানি বাস্কেট বাড়াতে হবে। সেটা বাড়াতে গেলে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার শিল্পায়ন। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশে যে বিশাল তরুণ সমাজ রয়েছে, তাদের সবার কর্মসংস্থান করাই এর মূল লক্ষ্য।
প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে আমাদের মেয়েরা খুব দক্ষ হয়ে থাকে। তাদের একটু সুযোগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিলে তারা অনেক কিছুই ঘরে বসে তৈরি করতে পারে।
চামড়া ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য আধুনিক কসাইখানা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চামড়াজাত পণ্যের ভালো বাজার রয়েছে বহির্বিশ্বে। কিন্তু আমাদের যেসব কসাইখানা রয়েছে, সেগুলো মান্ধাতা আমলের। তাই আমি মনে করি, প্রতিটি কসাইখানা আধুনিক রূপে গড়ে তোলা উচিত। পশু জবাই যদি আমরা প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে, আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে করতে পারি, তবে এর সবকিছুই কাজে লাগানো সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাছ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ, আমরা আলু উৎপাদন করতে পারছি, সবজি উৎপাদনে আমরা চতুর্থ স্থানে রয়েছি, খাদ্য উৎপাদনে চতুর্থ, কাজেই এসব পণ্য রফতানির জন্য আমাদের আধুনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।