প্রভাষক মো. সাইফুর রহমান (২৯) হত্যা রহস্য
সিলেট প্রতিনিধি,
সিলেটের মদন মোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. সাইফুর রহমান (২৯) হত্যা রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। জোর পূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে, ভুয়া কাবিন নামা তৈরি ও আপত্তিকর ছবি ফাঁস করে দেয়া হবে বলে বার বার হুমকি দেয়ায় কলেজছাত্রী নিশাত তাসনিম রুপা (২০) অতিষ্ট হয়ে প্রভাষক সাইফুর রহমানকে বিষ খাইয়ে পরে শ্বাসরুদ্ধে হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে আদালতে।
সোমবার দুপুরে সিলেট মহানগর বিচারিক হাকিম ৩য় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমানের নিকট ১৬৪ ধারায় তারা জবানবন্দি প্রদান করে রুপা ও তার প্রেমিক মোজাম্মিল হোসেন (২৪)। তারা দুজনই এমসি কলেজের শিক্ষার্থী। স্বীকারোক্তির পর আদালত তাদের জেল হাজাতে পাঠিয়েছেন।
ছাতক উপজেলার আলমপুর গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মিল হোসেন (২৪) এবং নগরীর শাহপরান এলাকার খিদিরপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের মেয়ে নিশাত তাসনিম রুপা (২০)। রবিবার প্রভাষক সাইফুরের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ দুজনেকেই গ্রেফতার করে। পরে সোমবার আদালতে হাজির করা হলে আদালতে হত্যার স্বীকারোক্তি দেয় তারা।
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল জানান, নগরীর সোবহানীঘাটস্থ হোটেল মেহেরপুরে শ্বাসরুদ্ধে হত্যা করা হয় প্রভাষক সাইফুর রহমানকে। পরে লাশ ফেলে দেয়া হয় দক্ষিণ সুরমায়। প্রেমঘটিত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড বলে জানান ওসি।
ওসি জানান, তেলিরাই বাইপাস এলাকায় লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় জনগণ পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশটি উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজহাসপাতাল মর্গে পাঠায়। উদ্ধারের সময় লাশটির পরিচয় শনাক্ত করেন স্বজনরা।
যেভাবে হত্যা
ওসি খায়রুল গ্রেফতারকৃত আসামিদের বরাত দিয়ে গতকাল রাতে ইত্তেফাককে জানান, প্রভাষক মো. সাইফুর রহমান দীর্ঘ কয়েক বছর রুপাদের বাসায় লজিং থাকতেন। এই সুবাদে তিনি রুপার সাথে জোর করে শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তুলেন তখন সে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তিনি রুপার ঘনিষ্ট ছবি ধারণ করেন এবং ভুয়া কাবিন নামাও তৈরি করেন।
তাকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করতেন। এতে রুপা অতিষ্ট হয়ে উঠে। এরই মধ্যে রুপার আরেক বোনের প্রতিও তার লোলপ দৃষ্টি পড়ে।
এক পর্যায়ে অভিভাবকরা বিষয়টি ঠের পেয়ে ঐ প্রভাষককে বাড়ি থেকে বের করে দিলে প্রভাষক টিলা গড়ের একটি মেসে উঠেন। কিন্তু তিনি নাকি রুপার পিছু ছাড়েননি। বিষয়টি রুপা তার প্রেমিক কলেজছাত্র মোজাম্মিল হোসেনকে সব কিছু খুলে বলে। মোজাম্মেল তাকে সাবধান থাকতে বলে। কিন্তু প্রভাষক তার পিছু ছাড়েননি। তিনি রুপার প্রেমিকেও হুমকি দিতে থাকেন।
এই পর্যায়ে গত শনিবার প্রভাষক সাইফুর রহমান রুপাকে নাস্তা নিয়ে দেখা করতে বললে রুপা নাস্তার সাথে বিষ মিশিয়ে খায়িয়ে দিয়ে হোটেলে নিয়ে গেলে সেখানে প্রভাষক দুর্বল হয়ে পড়েন। তখন রুপা প্রভাষক সাইফুরকে শ্বাসরুদ্ধে মেরে ফেলে। পরে রুপা তার প্রেমিক মোজাম্মিলকে ফোন দিলে হোটেলে পৌছে সাইফুর রহমান অসুস্থ বলে হোটেল থেকে নিয়ে আসে। তারা সাইফুরের লাশ একটি সিএনজি অটো রিক্সা করে নিয়ে দক্ষিণ সুরমার তেলিরাই এলাকায় নিয়ে ফেলে দেয়। রবিবার সকালে দক্ষিণ সুরমার তেলিরাই নামক স্থান থেকে সাইফুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এমসি কলেজে মানববন্ধন: এদিকে সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের সাবেক ছাত্র মো. সাইফুর রহমানকে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করা হয় গতকাল এমসি কলেজের সম্মুখের সিলেট-তামাবিল সড়কে। এতে কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
সোমবার দুপুর ১টায় কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধনের এক পর্যায়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। এসময় রাস্তার দু‘পাশে যানবাহন আটকা পড়ে। মানববন্ধনে বক্তারা সাইফুরের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্চারন করেন বক্তারা।
নিহত সাইফুর রহমান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফুলতৈলছগাম গ্রামের মোঃ ইউসুফ আলীর ছেলে। তিনি সিলেট নগরীর মদন মোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক এবং গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল কলেজে খন্ডকালীন প্রভাষক ছিলেন।
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার লামাবাজার এলাকায় সড়কে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন মদনমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারাঅনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।