স্থানীয়ভাবে গাড়ি উৎপাদনে বিশেষ সুবিধা : এনবিআর

সাইদুর রনি,

আমদানি নির্ভরতা কমাতে স্থানীয়ভাবে গাড়ি উৎপাদনে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। পাশাপাশি রিকন্ডিশন গাড়ির ক্ষেত্রে শুল্কবৈষম্য কমানোর কথাও জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের কার্যালয়ে বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সঙ্গে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমানোসহ সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সব ক্ষেত্রে কর হ্রাসের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। অনুষ্ঠানে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিতে বিভিন্ন ধরনের শুল্কবৈষম্য দূরীকরণ ও নতুন গাড়ি আমদানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধের দাবি জানান বারভিডার নেতারা।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআরের ভ্যাটনীতির সদস্য মো. রেজাউল হাসান, শুল্কনীতির সদস্য ফিরোজ শাহ আলম, করনীতির সদস্য কানন কুমার রায়সহ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বারভিডার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সব ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিডাকশন (করহ্রাস) চাইবেন না। প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়ছে। গতবারের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়বে। সেজন্য রাজস্ব আয়ও বাড়াতে হবে। আমাদের কর জিডিপি খুবই কম। এটি বাড়াতে হবে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে রাজস্ব আহরণ বাড়েনি। ফলে কর কমানোর পরিবর্তে বাড়ানো যায় এমন প্রস্তাব দরকার। আমরা স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে চাই। স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে কর্মসংস্থান বাড়ে। এ কারণে আমদানিতে বেশি সুযোগ না দিয়ে স্থানীয়ভাবে গাড়ি উৎপাদনে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় নিজেদের দাবি তুলে ধরেন বারভিডার সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন। তিনি বলেন, দেশে পরিবেশবান্ধব ভালো মানের গাড়ি সরবরাহে ভূমিকা রাখছে বারভিডা। রিকন্ডিশনড হাইব্রিড গাড়ি আমদানির মাধ্যমে পাবলিক বাসের স্বল্পতা পূরণ করছি আমরা। জাপান থেকে পাঁচ বছরের পুরনো একটি গাড়ি আমদানির পর তা আরো ১৫-২০ বছর ব্যবহার করা যায়। তবে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে নতুন গাড়ি আমদানি হওয়ায় এর শুল্ককর হাইব্রিড গাড়ির চেয়ে কম হয়। হাইব্রিড গাড়িতে আমাদের অনেক বেশি শুল্ক প্রদান করতে হয়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নতুন ও হাইব্রিড গাড়ির শুল্কবৈষম্য তুলে ধরে তা সমন্বয়ের দাবি জানান তিনি।

হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে সিসিভিত্তিক শুল্কহার পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বারভিডার সভাপতি বলেন, বায়ুদূষণের কারণে দেশ প্রতি বছর ১ শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবুজ ও রিকন্ডিশন গাড়ি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। গাড়ির সিসি স্ল্যাব পরিবর্তন করে নতুন শুল্ক কাঠামো হলে অধিক হারে গাড়ি আমদানি হবে। ফলে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয় হবে। হাইব্রিড গাড়ি জনপ্রিয় করতে শূন্য থেকে ১৮০০ সিসি পর্যন্ত ২০ শতাংশ শুল্ক ঠিক রেখে বাকিগুলো পরিবর্তন করা যেতে পারে। ১৮০১ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ শুল্ক করার দাবি করেন তিনি। তাছাড়া বেশি যাত্রী পরিবহনযোগ্য মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয় রিহ্যাব।

বৈদ্যুতিক ব্যাটারিচালিত রিকন্ডিশনড গাড়ি পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে তা আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন হাবিব উল্লাহ ডন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি ৮ ঘণ্টা চার্জ দিলে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যায়। এটি জনপ্রিয় করা গেলে জ্বালানি তেলের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি পরিবেশের দূষণ কমানো সম্ভব।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানিতে একটা শুল্কস্তর আছে। এটি তুলনামূলক কম। এর চেয়ে কমাতে স্থানীয় গাড়ি উদ্যোক্তা গড়ে উঠবে না। আমরা চাই গাড়ি উৎপাদনে স্থানীয় উদ্যোক্তারা যেন সুযোগ পায়। তবে নতুন ও হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে শুল্কবৈষম্যের বিষয়টি আমরা দেখব। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয় নিয়ে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে এনবিআরের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এফবিসিআইয়ের পরিচালক আব্দুল হক বলেন, স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে নীতিসহায়তা দেয়া হোক, তা আমরা সবাই চাই। তবে এমন নীতিমালা করা যাবে না, যাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠবে না, আবার আমদানিও কমে যাবে। যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন হয় না, তাতে শুল্ক বাড়ানোর পরিবর্তে কমানো বেশি যৌক্তিক।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *