বিএনপির কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়নি: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার,

ঢাকা লিগ্যাল নিউজ : বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যাসহ নানা অপকর্মে সম্পৃক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। এখন শুনছি, বিএনপি থেকে চিৎকার করা হচ্ছে তাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। একটাও মিথ্যা মামলা হয়নি। যারা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, গ্রেনেড হামলা, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে অগণিত নেতাকর্মী হত্যা এসবে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা তো হবেই। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মামলাও আওয়ামী লীগ সরকার করেনি। এতিমের টাকা খেয়ে পার পেয়ে যেতে পারেননি, তাদেরই পছন্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেওয়া মামলায় তিনি জেলে।’

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মানুষের অহেতুক ভিড় করা ও সেলফি তোলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কোথাও আগুন লাগলে কিছু মানুষ অযথাই ভিড় করে। অনেকে সেখানে গিয়ে সেলফি তোলেন। আগুন নেভানোর কাজ না করে সেলফি তুলতে যে কী আনন্দ তা বুঝি না! আর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যখন অগ্নিনির্বাপণে যান, তখনও কিছু লোক সেখানে ভিড় করে তাদের মারতে যান। এমনকি বনানীর আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে। একেকটা গাড়ির দাম আট থেকে দশ কোটি টাকা। তারা উদ্ধারকারীদের ওপর হামলা না চালিয়ে যদি এক বালতি করে পানিও নিয়ে যেতেন, তাহলেও কাজ হতো। কাজেই মানুষের এই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’

তবে সম্প্রতি কয়েকটি আগুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও কিছু লোক দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন। তবে কিছু মানুষ অযথা ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে, তারা দাঁড়িয়ে না থেকে জায়গাটা খালি রাখলেও উদ্ধারকারীদের জন্য কাজ সহজ হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জনগণ উন্নয়ন চায়, শান্তি চায়। সুন্দরভাবে বাঁচতে চায়। আওয়ামী লীগ দেশে এমন পরিস্থিতিই সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। তাতে আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা আর বিশ্বাস অর্জন করেছে। এজন্যই আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়।’

এর বিপরীতে মনোনয়নবাণিজ্য ও অতীত অপকর্মের কারণে বিএনপি এবারের নির্বাচনে জিততে পারেনি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন করতে আসেনি। তারা নির্বাচনকে বাণিজ্য ক্ষেত্র বানিয়েছিল। টাকা খেয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। তিনশ’ আসনে ৬৯২ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এক আসনে দুই থেকে চারজনকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সকালে একজন বিকেলে আরেকজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই মনোনয়নবাণিজ্যের কারণে এমনকি যেসব আসনে তাদের প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেসব আসনেও ওই প্রার্থীকে না দিয়ে টাকা যিনি বেশি দিয়েছেন, তাকেই প্রার্থী করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়েও কোনো প্রশ্ন ছিল না। ওই নির্বাচনে ৮৪ ভাগ মানুষ ভোট দিয়েছে আর বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল। এবারের নির্বাচনে ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। কিন্তু যেসব আসনে বিএনপির জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, মনোনয়নবাণিজ্যের কারণে সেটাও হয়নি। এই কারণেই তারা অনেক কম আসন পেয়েছে। এমনও হয়েছে, কারাগার থেকে খালেদা জিয়া একজনকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আর লন্ডন থেকে ওহি আসার পর বিপুল টাকার বিনিময়ে আরেকজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এভাবে ক্ষমতায় আসা যায় না, চোর হওয়া যায়।

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি এলার্ট জারির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঠিক কী কারণে এই সিকিউরিটি এলার্ট জারি করা হয়েছে– সেটি আমাদের জানা নেই। তাই এলার্ট জারির আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। তারপরও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি কেন এই সিকিউরিটি এলার্ট।’

হঠাৎ করে আগুন লাগার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এই এলার্ট জারি করেছে কি-না এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমেরিকা-লন্ডনেও তো আগুন লেগে অনেক মানুষ মারা যায়। সেসব দেশে তো আমাদের মতো এত সময় দিয়ে উদ্ধার অভিযানও চালানো হয় না। তাহলে কেন এই এলার্ট– সেটিও জানানো উচিত। কারণ সন্ত্রাসবাদের সমস্যা সারা বিশ্বেরই। একটি ঘটনা ঘটলে তার প্রভাবও সারাবিশ্বে পড়ে। তাই আমেরিকার কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা অতি দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের ফলে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। আজ আওয়ামী লীগ সরকারের পরিচালনায় দেশে শান্তি ফিরেছে। মানুষ নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। ক্রমবর্ধমান উন্নয়নশীল দেশের শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, প্রবৃদ্ধিতে অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। আগামীতে ৮ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। সেভাবেই সরকার দেশ পরিচালনা করছে।

দুই মেয়াদে দেশ ও জনগণের কল্যাণে তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। মানুষ যেহেতু বিশ্বাস রেখেছে, সেই বিশ্বাস রাখার জন্য আমরা কাজ করছি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশে হতদরিদ্র বলে আর কেউ থাকবে না। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের মধ্যেই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ২০৪১ সালে এদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। আর ২০৭১ সালে আমরা হয়তো থাকবো না, কিন্তু যারা থাকবেন, একটি আধুনিক দেশের নাগরিক হিসেবে তারা স্বাধীনতার শতবর্

শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের মধ্যেই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ২০৪১ সালে এদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। আর ২০৭১ সালে আমরা হয়তো থাকবো না, কিন্তু যারা থাকবেন, একটি আধুনিক দেশের নাগরিক হিসেবে তারা স্বাধীনতার শতবর্ষ পালন করবেন। আর ২১০০ সালের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও আমরা ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’

‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই উক্তি উল্লেখ করে বাংলাদেশকে কেউ আর দাবিয়ে রাখতে পারবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *