দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস হতে হবে পুঁজিবাজার : ড. ফরাসউদ্দিন

 

ঢাকা, ৫ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : দেশে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছে বিনিয়োগকারীরা। ব্যাংক নয়, দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের উৎস হোক পুঁজিবাজার।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০১৯ এর দ্বিতীয় দিন আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি ও মান উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এ কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা ড. এস কে সুর চৌধুরী। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর পরিচালক শাহ মো. আহসান, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রাইম ব্যাংকের এএমডি তাবারক হোসেন ভূঞা এবং আইআইডিএফসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার ভূইয়া।

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বিশ্বের কোথাও দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নে ব্যাংকের উপর নির্ভরতা নেই। অন্যান্য দেশে এ অর্থায়ন হয় পুঁজিবাজার থেকে। আমাদের দেশেও দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন হোক পুঁজিবাজার থেকে। এতে ব্যাংক নির্ভরতা কমবে, অপরদিকে ব্যাংকের নন পারফর্মিং লোন নিয়ে যে ঝুঁকিতে আছে তা থেকে রক্ষা পাবে।

ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘১৯৯২-৯৩ সালে সরকার কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেছিল দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের জন্য। আর তা বিজ্ঞজনিত কাজ হয়নি। আমি সরকারকে অনুরোধ করবো এ ধরনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নে মনোযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে।’
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করতে হবে, করপোরেট বন্ডের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।

ফরাসউদ্দিন আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিমাণ অবদান রাখছে তার স্বীকৃতি তেমন দেয়া হয় না। তবে এডি রেশিও নিয়ে যে নিয়ম রয়েছে তা পালন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো এক সময় বাপদাদার নাম ভুলে যাওয়ার অবস্থা হতো। কিন্তু এখন এডি রেশিওর নিয়ম পরিপালন না করলেও কোনো সমস্যা হয় না। কিছু দিন আগে এডি রেশিও দশমিক ৭ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫ এ নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপরও ২৫ টি ব্যাংক তা পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানেও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
সঞ্চয়পত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, দয়াকরে সঞ্চয়পত্রে দিকে হাত দিবেন না। কারণ এ সঞ্চয়পত্র দেশের লাখ লাখ মধ্যবিত্ত পরিবারের শেষ সম্বল। তারা এই সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে উপকৃত হয়।

ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন দেশে যদি তিনটি ব্যাংক থাকে এবং এর শাখার সংখ্যা যদি ৬০০টি হয়, অন্য কোন দেশে ১০টি ব্যাংকের শাখা যদি ২০০ টি হয়, তাহলে কাদের শাখার সংখ্যা বেশি একবার চিন্তা করে দেখুন। সুতরাং এই কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা আর্থিক খাতে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাংক যেমন ভূমিকা রাখছে অপরদিকে এর কিছু সমস্যাও রয়েছে এই খাতে। কারণ আমাদের দেশের বেশিরভাগ আমানত স্বল্পমেয়াদে সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদে বিতরণ করা হয়। যা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই আশঙ্কাজনক। এই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে দীর্ঘমেয়াদি আমানত সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *