শ্রমিকের সন্তান যেন শ্রমিক না হয়: শ্রমপ্রতিমন্ত্রী

ওমর ফারুক

লিগ্যাল ভয়েস : রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য সরকারি উদ্যোগে কল্যাণ ফান্ড গঠন করা হয়েছে জানিয়ে শ্রমপ্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষের সন্তানরা যেন শ্রমিক না হয়, তারা যেন অফিসার হতে পারে সেই লক্ষ্যেই এই তহবিল।

মঙ্গলবার পোশাকখাতে কর্মরত শ্রমিকদের চিকিৎসা ভাতা ও শ্রমিকের সন্তানদের মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন এক সময়ের শ্রমিক নেত্রী সুফিয়ান।

কারওয়ান বাজার বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ৯৭জন শ্রমিককে চিকিৎসাবাবাদ ৩১লাখ ১০হাজার টাকা এবং ৮২জন মেধাবী সন্তানকে ১৬লাখ ৪০হাজার টাকার শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয় শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে।

পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় থেকে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হারে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে এই তহবিল কার্যকর হয়ে আসছে।

ইতোমধ্যে দুই হাজার ১৯৯ জনকে বিমাদাবি বাবদ ৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে এ ফান্ড গঠিত। মালিকদের আয়ের ওপর নির্ভর করে এটা বাড়তে থাকবে। শ্রমিক সঠিকভাবে শ্রম দিলে মালিকরা উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে লাভ করতে পারলে এই তহবিল আরও বড় হবে।

এ সময় পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিক্ষোভ ও সহিংসতা নিয়েও কথা বলেন শ্রমমন্ত্রী।

“কিছু লোক আছে যারা মালিকের কল্যাণ চায় না, শ্রমিকেরও কল্যাণ চায় না। তারা শুধু শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে তাদের মাঝে সংঘাত বাড়ায়। কোনো কারখানা বন্ধ থাকলে কিংবা ভাঙচুর করা হলে মূল ক্ষতিটি হয় শ্রমিকদের। মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন পরে।”

অনুষ্ঠানে পোশাক কারখানায় শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে সৃ্ষ্ট সংকট কাটাতে ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দাবি করেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের ২৮০ টি সিক (খারাপ অবস্থানে) ফ্যাক্টরি আছে। তাদের জন্য যেন এক্সিট পলিসি দেওয়া হয়। ৪৪ লাখ শ্রমিক আমাদের ডাটাবেইজে আছে। তাদের সার্থে আমরা কাজ করছি।

অনুষ্ঠানে মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রানী খান অভিযোগ করেন, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড গঠন করা হলেও তা শ্রমিকদের হাতে পৌঁছে অনেক দেরিতে। ফলে তা সঠিকভাবে শ্রমিকের কল্যাণে আসে না।

তিনি বলেন, “বাচ্চা পেটে নিয়ে আবেদন করেন শ্রমিকরা। সেই বাচ্চা অনেক বড় হয়ে গেলেও টাকা হাতে আসে না। অনেকে অসুস্থ হয়ে আবার সুস্থ হয়ে উঠেন। কিন্তু টাকা পান তার পরে।

বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিকেএমইএর সহ সভাপতি মনসুর আহমেদ, বিজেএমইএর সহ সভাপতি মোহাম্মদ নাসির, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম উম্মুল হাছনা।

শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনী ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু বলেন, যে শ্রমিকারা নানা রোগে ভুগছেন তাদের যেন দেখা হয়। এ ফান্ডের মাধ্যমে শ্রমিকদের ভাগ্য উন্নয়েনে চিকিৎসা ভাতা, মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়। তবে ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল’ এটা যেন না হয়। দ্রুত সময়ে শ্রমিকদের আবেদনে যেন সারা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে গত বছর নভেম্বরে চিকিৎসাবাবদ ৫৭ জনকে ২৬ লাখ ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। শিক্ষাবৃত্তি বাবদ ৫৮ জনকে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেয়া হয়।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *