রাস্তার কফি বিক্রেতা থেকে পার্লামেন্ট নির্বাচনে সোলেহা

আন্তর্জাতিক খবর,

লিগ্যাল ভয়েস : ইশা সোহেলা একজন হকার। যিনি ইন্দোনেশিয়ায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কফি বিক্রি করেন। দেশটির এবারের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অসংখ্য নারী প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ইশার ভাষায়, আমি রাস্তায় কফি বিক্রি করি। আমার আসনে তিন প্রার্থীর মধ্যে আমি একজন। আমি সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী।

দেশটির ইউনাইটেড ডেভলপমেন্ট পার্টির প্রার্থীর হয়ে একটি জেলায় পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে ভোটে লড়ছেন ইশা। আগামী ১৭ এপ্রিলের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে তিনি ৫০০ মার্কিন ডলার তার নির্বাচনী ফান্ডে জমাও দিয়েছেন। পোস্টার, বই ফটোকপি, কলম ও প্রচারণার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের জন্য যে অর্থ ব্যয় হয় সেটাও তিনি নিজের জমানো টাকা থেকেই খরচ করেন।

তিনি বলেন, আমাকে কিছু ক্রেতা প্রশ্ন করেন, আপনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন তার জন্য কি আপনার টাকা আছে? তখন আমি তাদেরকে বলি, আমার কোনো টাকা নেই। কিন্তু দয়া করে আপনি আমাকে সমর্থন দিন। আমি অন্যদের মতই একজন সিরিয়াস রাজনীতিবীদ। আমি এ এলাকার উন্নয়ন করতে চাই। আমার সব বন্ধু ও অন্যান্য হকারদেরকে তাদের জীবনের উন্নয়নের জন্যও সাহায্য চাই।

রাস্তায় ভোট চাওয়ার পর তার সম্পর্কে এক নারী ক্রেতা বলেন, অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে ইশা একজন। আমি অবশ্যই আশাবাদী তিনি সফল হবেন এবং একজন নেতা হয়ে উঠবেন। রাস্তার একজন হকার হয়ে তার এ অর্জন দেখে আমি ভীষণ খুশি। যদি নির্বাচনে জয়ী হন তাহলে নিজের জীবনেরও উন্নতি হবে বলে আশা করেন ইশা। তবে তার সেই স্বপ্নও বিশাল কিছু না। তিনি বলেন, আমি নির্বাচনে জয়ী হলে আমার পর্যাপ্ত খাবার ও পোশাক থাকবে। আমি হয়তো নিজের জন্য একটা মোটরবাইক কিনতে পারবো। তবে আমি কখনোই স্বপ্ন দেখি না, আমার একটা নিজস্ব বাড়ি কিংবা কোনো প্রাইভেট কার থাকবে। এটা আমার স্বপ্ন। আর মানুষ এ জন্যই আমাকে ভোট দিবে।

দেশটির আইন অনুযায়ী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ৩০ শতাংশ প্রার্থী নারী হতে হবে। ফলে অধিকাংশ দলেরই এ কোটা পূরণের ক্ষেত্রে লড়াই করে যেতে হয়। সেই কোটার অংশ হিসেবেই তিনি ওই দল থেকে এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার নির্বাচনে দাঁড়ানোর পিছনে কারণ সম্পর্কে বলেন, একদিন তার এক ক্রেতা তাকে ভোটে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন। যিনি নিজেও একজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। তার সেই ক্রেতার নাম আহমদ হামদি।

আহমদ হামদি বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি স্কুল পাশ করেছো কি না? সে বলল হ্যাঁ করেছি। কাজের সূত্র ধরে উনি যেহেতু শহরের সব জায়গায় হাটাহাটি করেন এবং কোথাও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তখনই আমার মনে হলো, আরে উনিই তো প্রচারণা করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। তাছাড়া সেসময় আমরাও নারী কোটা পূরণের ক্ষেত্রে বিশাল সমস্যায় ছিলাম। ফলে নির্দিধায় তাকে আমরা রাজনীতিতে আহ্বান জানালাম। তিনিও রাজি হয়ে গেলেন।

দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো একসময় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। তাকে অনুসরণ করে দেশটির অনেক মানুষ রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে। পাশাপাশি ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন চা বিক্রেতা ছিলেন বলেই জানা যায়। ইশার মতে, অর্থ ও ক্ষমতা দিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। প্রত্যেক ইন্দোনেশিয়ানের রাজনীতিতে প্রবেশের অধিকার রয়েছে। ফলে যখন আমি মানুষকে এসব বলি তারা আমার কথা বোঝেন।

সবশেষে ইশা দুষ্টুমি করে ইশা বলেন, আমি দেখতে অনেক সুন্দর তাই না? আমি সেলুনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছি। আমি দেখতে আসলে একজন সুন্দরী অভিনেত্রীর মত।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *