১৮ তলা রংপুর জেলা পরিষদ সিটি সেন্টার : অর্থ সংকটে বন্দ আছে নির্মাণকাজ

স্টাফ রিপোর্টার,

লিগ্যাল ভয়েস : রংপুরে ১৮ তলাবিশিষ্ট জেলা পরিষদ সিটি সেন্টার মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। নিজস্ব অর্থায়নে প্রথম পর্যায়ে ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। তবে দোকান বিক্রি না হওয়া এবং ক্রেতারা টাকা পরিশোধ না করায় ভবনটির প্রথম পর্যায়ের নির্মাণকাজ থেমে আছে।

ভবনটির ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণের জন্য ১৫৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ৭২১ টাকা প্রয়োজন হলেও পাওয়া গেছে মাত্র ২৫ কোটি টাকা। এ কারণে ছয় মাস আগে প্রথম লটে বেজমেন্টের কাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় লটের কাজ শুরু করা যায়নি।জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন নিয়ে রংপুর জেলা পরিষদ তিন একর জমিতে বেজমেন্টসহ ১৮ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

রংপুর নগরীর কেন্দ্রস্থলে স্টেশন রোডের পাশে জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট সংলগ্ন জমিতে এ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনটির আয়তন হবে ৮৪ হাজার ১৩৫ দশমিক ৭৪ বর্গফুট। পুরো ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায় চারটি লটে ১৫৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ৭২১ টাকা ভবনটির ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরুর কথা ছিল ২০১৪ সালে। তবে জমির মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের প্রথম দিকে। অর্থ সংকটে ভবনটির নির্মাণকাজ আবার আটকে গেছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম পর্যায়ের প্রথম লটে ভবনটির বেজমেন্টের কাজ শেষ হওয়ার পর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। সূত্র জানায়, দোকান বিক্রির টাকা দিয়ে ভবনটির ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণ করার কথা। নির্মাণাধীন ভবনটির প্রথম তলার প্রতি বর্গফুটের বিক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে ৭ টাকা। পরবর্তী তিনতলার বিক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা। ছয়তলায় মোট দোকান থাকবে ৬৬০টি। তবে এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৩৭৯টি। এসব দোকান বিক্রি বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ আদায় হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।

প্রথম পর্যায়ের প্রথম লটের কাজে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা। অর্থ সংকটের কারণে এ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাওনা প্রায় ১৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা যায়নি। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. নাজমুল হুদা বলেন, সরকারের ঋণ সহায়তা ছাড়াই শুধু ব্যবসায়ীদের সেলামির টাকায় এ ভবন নির্মাণ হচ্ছে। স্বভাবতই বিশাল কর্মকাণ্ড। মাত্র অর্ধেক দোকান বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া দোকান ঘরের পজিশন বাবদ মাত্র চারজন সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেছেন। ৭০ ভাগ ব্যবসায়ী এখনো টাকা দেননি। যারা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৯০ ভাগ ব্যবসায়ী শুধু বুকিংয়ের টাকা পরিশোধ করেছেন। দোকানের ক্রেতারা বলছেন, নির্মাণের ধীরগতির কারণে দোকান বুঝে নেয়া নিয়ে শঙ্কায় তারা টাকা পরিশোধ করেননি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ ২০১৬ সালে সিটি সেন্টার মার্কেটের চতুর্থ তলায় একটি দোকান ঘর বরাদ্দ বাবদ বুকিংসহ তিন কিস্তিতে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন, যা তার কাছে পাওনা মোট টাকার ৯০ ভাগ।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একতলার কাজই শুরু হয়নি। কবে চতুর্থ তলার কাজ শুরু হবে এবং দোকান বুঝে পাব বুঝতে পারছি না। দোকান কিনতে গিয়ে সুদে টাকা ধার নিতে হয়েছে বলে জানান তিনি। আরেক ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ সিটি সেন্টার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় পাঁচটি ঘরের বরাদ্দ বাবদ শতকরা ১০ ভাগ বুকিংসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। তিনি বলেন, গত বছর দোকান ঘরের পজেশন বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল।

জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণের কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারায় বাকি টাকা পরিশোধ করিনি। এ ব্যাপারে মো. নাজমুল হুদা বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দ্বিতীয় লটের কাজ শুরুর জন্য অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন কাজ শুরু করতে আর কোনো বাধা নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সিকিউরিটি জমা দিলেই কাজ শুরু হবে। আশা করি, চলতি বছরে চারতলার ছাদ পর্যন্ত নির্মাণ করা সম্ভব হবে। ভবন দৃশ্যমান হলে ব্যবসায়ীরাও টাকা পরিশোধ করবেন। রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম বলেন, সিটি সেন্টার চালু হলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তাছাড়া প্রতিদিন বহু মানুষ কেনাকাটা করবে, অনেকে ঘুরতে আসবে। এতে পুরো জেলার অর্থনীতিতে গতি আসবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *