হামলা চালানোর সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই: মনিরুল ইসলাম

সাইয়্যদ মো: রবিন,

লিগ্যাল ভয়েস : বাংলাদেশে এক সময় জঙ্গিদের তৎপরতা থাকলেও এখন তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন তাদের তৎপরতা নেই বললেই চলে। নতুন করে দেশে হামলা চালানোর মতো কোনো সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মিট উইথ মনিরুল ইসলাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে ক্র্যাব সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারওয়ার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমানসহ ক্র্যাব নেতৃবৃন্দ ও সিটিটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। তাদের তৎপররতা নেই বললেই চলে। তাদের নেটওর্য়াক দুর্বল হয়ে গেছে। তারপরও যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এদেশে জঙ্গি কার্যক্রম, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সংস্থাসমূহের সঙ্গে সমম্বয় রয়েছে। ভবিষ্যতে এই সমন্বয় আরও মজবুত হবে।’

‘সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কোনো দেশ, জাতি ধর্মের সঙ্গে এটাকে সম্পৃক্ত করা যাবে না। উন্নয়নশীল, অনুন্নয়নশীল এবং উন্নত কোনো দেশই এ সন্ত্রাসের থাবা থেকে নিরাপদ নয়।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে শ্রীলঙ্কায় বর্বর সন্ত্রাসী হামলা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমাদের দেশে এরূপ জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই। আমরা এ বিষয়ে তৎপর রয়েছি।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মূলত ২০১৪ সালের শেষদিকে কতিপয় লোক ‘আইএস’ এ যোগদান করেছে বলে কথিত আছে। আমাদের ধারণা মতে তাদের কেউ ধরা পড়েছে, কেউ নিহত হয়েছে অথবা কেউ চিহ্নিত হয়েছেন। তারা যদি এখন দেশে ফিরতে চায় তাহলে তাদেরকে অবশ্যই এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে ফিরতে হবে। এর জন্য তাদের পাসপোর্ট লাগবে। যেহেতু তারা ২০১৪ সালের শেষের দিকে গিয়েছে তাদের পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। দেশে ফিরতে হলে তাদেরকে নতুন করে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।’

মনিরুল বলেন, ‘সিরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে প্রাপ্ত পাসপোর্ট আবেদনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে পাসপোট দেয়া হচ্ছে। তাই আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের দেশে আসা সম্ভব নয়। এরপরও কেউ যদি ফিরে আসতে চায় তাহলে এয়ারপোর্টেই গ্রেপ্তার করা হবে।’

‘যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশের কারাগারে জঙ্গিরা রেডিক্যলাইজড হচ্ছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যাদের নামে মামলা হয়, তাদের পৃথক কারাগারে রাখা হয়। শুধু কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে যখন তাদের আদালতে নেয়া হয়, তখনই অন্যান্য আসামিদের সাথে দেখা হয়। এর বাইরে অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ নেই। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিচারের জন্য দুটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হয়েছে। তাদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদের আমদানিকারকরা চিহ্নিত হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে যারা আফগানিস্তান গিয়েছিল তারাই দেশে ফিরে ধর্মীয় ও সহিংসতাভিত্তিক জঙ্গিবাদের সূচনা করেছে। প্রথমদিকের এসব আমদানিকারকের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারো কারো ফাঁসি হয়েছে। কয়েকজন হয়তো পলাতক রয়েছে তবে সবাই চিহ্নিত।’ বাংলাদেশে আইএস’র খলিফা নিয়োগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আইএস এর নিজস্ব দাবি। বাংলাদেশ তাদের কোনো খলিফা নাই।’

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তারা দীর্ঘদিন এ দেশে থাকলে সোশ্যাল ডিজঅর্ডারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। তাদের দেশে পাঠাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘর ও পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে উগ্রবাদের জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তীক্ষ্ম নজরদারিতে রেখেছে। তাদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *