সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের কোন ধর্ম নেই, দেশকাল পাত্র নেই: প্রধানমন্ত্রী

সংসদ প্রতিনিধি,

লিগ্যাল ভয়েস : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশের কোথাও কোন অস্বাভাবিক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসী ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে মানুষ যেন জড়িত না হয়। আমরা জঙ্গিবাদ কঠোরহস্তে দমন করেছি। আমরা চাই না পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটুক। এসব ঘৃণ্য হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, সেসব সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের কোন ধর্ম নেই, দেশকাল পাত্র নেই। জঙ্গি জঙ্গিই, সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বোমা হামলায় নিহত শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ঘৃণ্য হামলায় শুধু জায়ান চৌধুরীই নয়, প্রায় ৪০ জনের কাছাকাছি শিশুসহ প্রায় সাড়ে তিনশ’ মানুষ মারা গেছে। এই ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও বোমা হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা নাই। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, এর মধ্যে হামলাকারীরা কি অর্জন করছে জানি না। এই ছোট নিষ্পাপ শিশু তো কোন অপরাধ করেনি? তারা কেন এভাবে জীবন দেবে? কিছুদিন পূর্বেই নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সরাসরি গুলিতে অনেকগুলো মানুষকে হত্যা করা হলো। সেখানেও নারী ছিল, শিশু ছিল। আমাদের ক্রিকেট টিমও ছিল। খুব অল্পের জন্য তারা বেঁচে গেছে। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মানুষের কোন কল্যাণ আনতে পারেনি।

ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মনুষ্য সৃষ্ট সন্ত্রাসও দেখেছি। নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। এই ধরনের অমানবিক ঘটনাগুলো সত্যিই মানব জাতির জন্য অকল্যাণকর।

তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের নামে যারা এসব কাজ করছে, ইসলাম যে শান্তির ধর্ম। সেই ধর্মকেই সকল মানব জাতির কাছে হেয়-প্রতিপন্ন করছে। সব ধর্মেই শান্তির কথা বলা আছে। তারপরেও কিছু লোক ধর্মীয় উম্মাদনার নামে মানুষের প্রতি আঘাত হানে, মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। যা মানবজাতির জন্য বেদনাদায়ক এবং কষ্টকর। তাই দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান, এই ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে মানুষ যেন জড়িত না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘৃণ্য কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরাই নয়, সহায়তাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। আওয়ামী লীগ চতুর্থবার সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পূর্বে ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে অনেক তথ্য প্রকাশ পায়। এ সব তথ্য হতে দেখা যায়, পরোক্ষভাবে দেশি-বিদেশি কিছু লোক ও সংস্থা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাই এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অন্যান্য পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী অরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এখনও যে সব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে এবং আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, পলাতক আসামি নূর চৌধুরী কিভাবে কানাডায় বসবাস করছেন সে সম্পর্কে তথ্য দিতে কানাডা সরকারকে বাধ্য করতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আবেদন করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ এ বিষয়ে আদালতে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। শুনানি শেষে বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। পলাতক আসামি রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে আইনগত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স কাজ করছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী, দায়িত্বশীল পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব অঙ্গনে অতীতের যে কোন সময়ের থেকে একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতায় দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক পরিমণ্ডলে আমাদের পদচারনা সুসংহত হয়েছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *