বিশ্ববাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ পরিহারের আহ্বান : শি জিনপিং
ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান,
লিগ্যাল ভয়েস : বিশ্ব নেতাদের প্রতি বৈশ্বিক বাণিজ্য কার্যক্রমে সংরক্ষণবাদ পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। একই সঙ্গে উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ছাড়াও অন্যান্য দেশকেও অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনদিনব্যাপী বিআরআই ফোরামের শেষ দিনে গতকাল ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার ৩৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। খবর এএফপি, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপস্থিতিতে ভাষণ দেয়ার সময় চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের এখন মুক্ত বিশ্বের অর্থনীতি গড়ে তোলার পাশাপাশি সংরক্ষণবাদকে পরিহার করা উচিত।
তিনি বলেন, সবার বক্তব্য শোনা, প্রত্যেকের পূর্ণ সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার এবং সবাইকে লাভবান করার জন্য ব্যাপক মাত্রায় আলোচনা, যৌথ অবদান ও স্বার্থ ভাগাভাগির নীতির প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
শি জিনপিং বলেন, বিআরআইকে হতে হবে উন্মুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব এবং উচ্চমাত্রায় মানসম্পন্ন ও গণমুখী। এটিকে হতে হবে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সাম্প্রতিক বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে বেশ তোলপাড় তুলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির জবাবে ‘সংরক্ষণবাদ পরিহারের’ স্লোগান তুলেছেন শি জিনপিং। সম্মেলনে কোনো মার্কিন প্রতিনিধি অংশ নেননি।
এছাড়া চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) নিয়ে আপত্তি তুলে প্রথমবারের মতো এবারের সম্মেলনেও অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে ভারত।
প্রাচীন সিল্করোডের পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে শি জিনপিংয়ের পররাষ্ট্রনীতি। নৌ, সড়ক ও রেলপথে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে এ সংযোগ গড়ে তুলতে চাইছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। এজন্য চীনা ব্যাংকগুলো থেকেও কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন করা হচ্ছে। শি জিনপিং বলেন, আমাদের আরো অনেক দেশ ও কোম্পানিকে (বিআরআই প্রকল্পে) পূর্ণ অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহী করা প্রয়োজন।
সমালোচকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী বেইজিংয়ের প্রভাব বাড়ানোর জন্য বিআরআই উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ প্রকল্পটি নিয়ে এখনো বেশ সন্দিহান।বিভিন্ন চীনা প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্প থেকে বেশ সুবিধা তুলে নিয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে চীনা অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ তাদের হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি দেশে বিআরআইর বাস্তবায়ন পিছিয়েও গেছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সম্প্রতি এমন কয়েকটি প্রকল্প বাতিল করেন। পরে দরকষাকষির মাধ্যমে একটি রেল প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় ৩০ শতাংশ কমিয়েও এনেছেন তিনি। যদিও বিআরআই সম্মেলনে অংশ নিয়ে এ প্রকল্পের অনেক প্রশংসা করেছেন মাহাথিরসহ অন্য বিশ্বনেতারা।
সম্মেলন শেষে শি জিনপিং সাংবাদিকদের বলেন, বিআরআই সম্মেলনে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মোট ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের চুক্তি সই হয়েছে। একই সঙ্গে বিপুলাকারের প্রকল্প নিয়ে সংশয় কমে আসায় আরো অনেক নতুন দেশ এতে অংশগ্রহণ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা সবাই এখানে উন্মুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে সহায়তা এবং সংরক্ষণবাদকে পরিহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরো অনেক বন্ধু ও সহযোগী যে বেল্ট অ্যান্ড রোড কো-অপারেশনে যুক্ত হচ্ছেন, এ বছরের বিআরআই ফোরাম থেকে তারই স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যাচ্ছে।
শি জিনপিং জানান, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগই হবে বিআরআই প্রকল্পগুলোর প্রধান চালিকাশক্তি। এখানে বাজারের নীতিমালারই প্রয়োগ ঘটবে এবং এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বিভিন্ন দেশের সরকার। এভাবে প্রকল্পগুলো আরো অনেক টেকসই হবে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ন্যায্য ও পক্ষপাতহীন পরিবেশ তৈরি করা যাবে।