সংসদে অর্থমন্ত্রী : ছয় মাসে বাজেট বাস্তবায়ন সাড়ে ২৭ শতাংশ
ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান,
লিগ্যাল ভয়েস : চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ঘোষিত মোট বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয়ের পরিমাণ ৯৭ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল জাতীয় সংসদে এক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এ তথ্য জানান।
অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাজেট বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী তার প্রতিবেদনে তুলে ধরেন। তিনি জানান, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। অন্যদিকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশীয় পয়েন্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার হ্রাস পাওয়ায় খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি গড়ে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে এটি ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বিশ্লেষণে বলেন, বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম অর্থবছরে আমরা ব্যাপক প্রত্যাশা ও বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেছি। বছরের প্রথমার্ধের অগ্রগতিতে দেখা যাচ্ছে, আমাদের গতিপথ সঠিক ধারায় রয়েছে। বিবেচ্য দ্বিতীয় প্রান্তিকে সামগ্রিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য চলকগুলোর ইতিবাচক অবস্থা, বিশেষ করে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, রফতানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বেসরকারি ঋণপ্রবাহের ঊর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা ও মূল্যস্ফীতির নিম্নগতি নির্দেশ করছে, উন্নয়নের মহাসড়কের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রযাত্রা সুদৃঢ় হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আমাদের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সামনের দিনগুলোয় আমাদের অন্যতম কৌশল হবে অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, বহুমুখীকরণের মাধ্যমে গুণগত ও মানসম্পন্ন রফতানি পণ্য উৎপাদন, বিদ্যমান বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার অন্বেষণ।
প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানি প্রবৃদ্ধি, প্রবাসী আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রা বিনিময় হারসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকগুলোর সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। বিবিএসের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা এ-যাবত্কালের রেকর্ড। জিডিপিতে এ প্রবৃদ্ধি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি হতে যাচ্ছে, যা আগের তিন অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি ছিল। এছাড়া মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ১ হাজার ৯০৯ ডলার।
বাজেট বিশ্লেষণে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে এনবিআরের কর রাজস্ব আয় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। মোট সরকারি ব্যয় ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি আয় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশে। এছাড়া আমদানি ঋণপত্র খোলার হার হ্রাস পেয়েছে ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলারে। এছাড়া বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।