বিমানের অনিয়ম ও দুর্নীতি
রিভা আহমেদ,
লিগ্যাল ভয়েস : অনিয়মের অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিপণন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও লন্ডন থেকে আসা কান্ট্রি ম্যানেজারকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। একই মাসের শেষ কর্মদিবসে মেয়াদ পূর্তির আগেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএম মোসাদ্দিক আহমেদকে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি পাঠিয়ে বিমানের ১০ কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় আছেন আরো কয়েকজন। সব মিলিয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাটির প্রশাসনে।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে বিমানের ১৪৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবানবন্দি নিতে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। এর মধ্যে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে তিন পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তার। একই সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকেও গঠন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি। এসব কমিটি উড়োজাহাজ লিজে অনিয়ম, বৈমানিক নিয়োগে অস্বচ্ছতা, কার্গো খাতের আয় কোষাগারে জমা না হওয়া, বৈদেশিক স্টেশনগুলোর ফ্রি টিকিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে।
এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিপরীতে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছে বিমানের একটি অংশ। একই সঙ্গে বিমান শ্রমিক লীগ সিবিএ নেতাদের নাম দুদকে পাঠিয়ে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিষয়টিকেও উদ্দেশ্যমূলক দাবি করেছেন তারা।
গতকাল প্রধান কার্যালয় বলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বিমানের দুর্নীতিতে জড়িত মূল হোতাদের আড়ালে রাখার অপচেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিকুর রহমান। তিনি বলেন, জাতির দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই বিমান শ্রমিক লীগ নেতাদের নাম দুদকে পাঠিয়ে রাঘববোয়ালদের আড়াল করার অপচেষ্টা হচ্ছে।
বিমান শ্রমিক লীগ সভাপতি বলেন, বিমানের প্রায় ছয় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে শুধু বিমান শ্রমিক লীগ সিবিএ নেতাদের কেন বারবার হয়রানি করা হচ্ছে? সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ৭৭৭ উড়োজাহাজ, ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ লিজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ওভারহোলিং, জিএসএ নিয়োগে একক ব্যবসা সুপ্রতিষ্ঠিত করার খবর সংবাদপত্রে এসেছে। সেসব বিষয় থেকে জাতির দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই এ অপচেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আহমেদের চাকরির মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ মে শেষ হওয়ার কথা। চাকরির মেয়াদ এক মাস বাকি থাকতেই গত মঙ্গলবার পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। তার বিরুদ্ধে পাইলট নিয়োগ, বিমানের বিভিন্ন স্টেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার নিয়োগসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। বিমানের পাইলট নিয়োগের বিষয়ে ২০১৮ সালে মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদনে পাইলট নিয়োগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি উল্লেখ করে। এর মধ্যে এমডি মোসাদ্দিক আহমেদের আপন ভাতিজাকেও পাইলট হিসেবে নিয়োগ দিতে বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
এদিকে লন্ডনে কোটি কোটি টাকার ফ্রি টিকিট ইস্যু করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠলে লন্ডনে বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার শফিকুল ইসলামকে ওএসডি করা হয়। শফিকুল ইসলামের চার বছরের মেয়াদে লন্ডন লোকাল স্টেশন থেকে ২ হাজার ৪৭২টি ফ্রি টিকিট ইস্যু করা হয়েছে। যাদের সবাই লন্ডন থেকে ঢাকায় এসে আবার লন্ডনে ফেরত গেছেন। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ছিলেন ১ হাজার ১৩৬ ও ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী ছিলেন ১ হাজার ৩৩৬ জন। এছাড়া বিপণন
বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে বিমান মনোনীত কিছু ট্রাভেল এজেন্সিকে সিট ব্লক করে বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, উড়োজাহাজ লিজ, টিকিট বিক্রি, কার্গো পরিবহনসহ বিমানের বিভিন্ন খাতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব দূর করতে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। যার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশকিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।