মানুষের হাতে বিলুপ্তির পথে প্রায় ১০ লাখ প্রজাতি

লোপা রাকিব,

লিগ্যাল ভয়েস : ভূমিতে, সমুদ্রে কিংবা আকাশে মানুষের হাতে বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে অন্তত ১০ লাখ প্রজাতি।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ রোমহর্ষক তথ্য উঠে এসেছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে অধিক হারে প্রকৃতিতে প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে। অধিক খাবার ও জ্বালানি সংগ্রহের দিকে মানুষের প্রচেষ্টা এখানে প্রধান ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘের গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রজাতির এ বিলুপ্তি থামানো সম্ভব, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আন্তঃসম্পর্কের ‘রূপান্তরমূলক পরিবর্তন’ আনা আবশ্যক।

তিন বছরে তৈরিকৃত এ প্রতিবেদনে ১৫ হাজার রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। ১ হাজার ৮০০ পৃষ্ঠা দীর্ঘ এ প্রতিবেদনটি সংকলিত করেছে ইন্টারগভর্নমেন্টাল সায়েন্স-পলিসি প্লাটফর্ম অন বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস (আইপিবিইএস)।

প্যারিসে গতকালের বৈঠকে ৪০ পৃষ্ঠার একটি পলিসি সামারি প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে উঠে এসেছে পৃথিবীতে মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতিহাসজুড়েই মানুষের হাতে ভুক্তভোগী হয়েছে প্রকৃতি এবং গত ৫০ বছরে তারা প্রকৃতিতে আরো গভীর খত সৃষ্টি করেছে। ১৯৭০-এর পর বিশ্বের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি চার গুণ সম্প্রসারিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বেড়েছে ১০ গুণ।

বিশালসংখ্যক এ মানবগোষ্ঠীর খাদ্য, বস্ত্র ও জ্বালানি চাহিদা পূরণে বিস্ময়কর হারে বন ধ্বংস করা হয়েছে, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ১০ কোটি হেক্টর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকায় গবাদি পশুর খামার তৈরি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাম ওয়েল চাষে এ বিশাল বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। বনভূমির চেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি জলাভূমির। ১৭০০ সালে ছিল এমন জলাভূমির মাত্র ১৩ শতাংশ ২০০০ সালে বিরাজমান। বিশ্বজুড়ে দ্রুত নগরায়ণ হয়েছে এবং ১৯৯২ সালের পর নগরাঞ্চল দ্বিগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে।

মানবসৃষ্ট কারণে ইতিহাসের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিকসংখ্যক প্রজাতি ধ্বংস হয়েছে। আইপিবিইএস প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রাণী ও বৃক্ষ বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে।
বিশ্বে কী পরিমাণ পোকামাকড় বিলুপ্ত হয়েছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না থাকলেও কিছু অঞ্চলে বিলুপ্তির শক্তিশালী তথ্য পাওয়া গেছে।

আগামী কয়েক দশকে প্রায় ১০ লাখ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হচ্ছে। গত এক কোটি বছরের যেকোনো সময়ের বিলুপ্তির হারের চেয়ে যা ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় মাটি দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পৃথিবীর মোট ভূপৃষ্ঠের প্রায় ২৩ শতাংশ ভূমির উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয়ে পড়েছে। আমাদের অসীম ভোগলিপ্সা বর্জ্যের পাহাড় তৈরি করছে। ১৯৮০ সালের পর বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণ ১০ গুণ বেড়েছে। প্রতি বছর আমরা বিশ্বজুড়ে ৩০-৪০ কোটি টন ভারী ধাতব পদার্থ, বিষাক্ত পদার্থ ও অন্যান্য বর্জ্য পানিতে নিক্ষেপ করছি। ২০১৪ সালে বিশ্বের মহাসাগরগুলো মাত্র ৩ শতাংশ মানুষের চাপ থেকে মুক্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছিল।

গত ১৫০ বছরে বিশ্বের জীবন্ত প্রবালের অর্ধেকই ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাণিসম্পদ বিলুপ্তির পেছনে কাজ করছে মানুষের প্রাণী শিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও আক্রমণাত্মক প্রজাতি। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকগুলো কারণ একসঙ্গে মিলিত হয়ে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক করে তুলেছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *