তামাকজনিত রোগের ফলে মৃতের সংখ্যা ২০০৪ সালের ৫৭ হাজার জনের তুলনায় ২০১৮ সালে দ্বিগুন

স্টাফ রিপোর্টার,

লিগ্যাল ভয়েস : তামাকজনিত রোগের ফলে মৃতের সংখ্যা ২০০৪ সালের ৫৭ হাজার জনের তুলনায় ২০১৮ সালে দ্বিগুনের বেশি হয়েছে। একইসাথে এ সময়কালে তামাকজনিত ব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণে (মূল্যস্ফীতি-সমন্বিত) অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

রবিবার এক অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য বিষয়ক এক গবেষণার এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০১৯ উপলক্ষে সেমিনার ও ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক ২০১৯ প্রদান ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও জাতীয় তামাক বিরোধী প্লটফর্ম।

আগারগাঁও পিকেএসএফ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) আব্দুল মালিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ও তামাক বিরোধী জাতীয় প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির উদ্যোগে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ক্যান্সার সোসইটি ও ক্যান্সার রিসার্চ-ইউকে এর সহোযোগিতায় স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা উঠে আসে তামাকজনিত অসুখ ও অকাল মৃত্যুর কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় । যা ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জাতীয় আয়ের (জিডিপি) ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

বর্তমানে দেশে ১৫ লাখের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী তামাক সেবনের কারণে এবং ৬১ হাজারের অধিক শিশু পরোক্ষ ধুমপানের প্রভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। ২০১৮ সালে তামাকজনিত রোগে প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার জনের অকাল মৃত্যু হয়েছে , যা এ সময়ে দেশে সকল মৃত্যুর ১৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশজূড়ে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারসহ সমাজের সকলের সমন্বিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই। বক্তারা বলেন অর্থনীতিতে তামাক গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখে, এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। কারন এর ক্ষতিকর দিক বেশি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন তামাক খাত হতে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সরকারি কোষাগারে আসে। আমাদের অন্য খাত থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। তাহলেই তামাকের ওপর রাজস্বের এই নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে হবে। তাদের অন্য ফসল চাষে উৎসাহিত করতে হবে।আর এ জন্য কৃষিখাতের আধুনিকায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ প্রয়োজন। এটা এখন সময়ের দাবি এবং সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের সম্প্রসারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, আলুর চাহিদা আমাদের ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টন এবছর উৎপাদন হয়েছে এক কোটি তিন লক্ষ টন। আমনের চাহিদা এক কোটি ৪০ লাখ টন এবার উৎপাদদন হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ টন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষকরা আলু উৎপাদন করে দাম পাচ্ছে না অথচ বাজার থেকে একটি চিপস আমরা কত দাম দিয়ে কিনছি। আমাদের কৃষি পণ্য দিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজত খাবার বানাতে হবে।

জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অবঃ) আব্দুল মালিক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে তামাক চাষ ও এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরী। তামাক নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা থাকলেও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও কর্ম-পরিকল্পনা নেই। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকলস্তরের মানুষকে মানুষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, তামাক সেবনের ফলে দেশের যুব সমাজ প্রথমে তামাকের প্রতি এবং পরে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। বাজেটে প্রতিবছর তামাকজাত পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি তেমন ফলপ্রসু হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে এবং তৃণমুল পর্যায় থেকে উদ্যোগ প্রহণ করতে হবে। সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি পিকেএসএফ কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি সরবরাহ, অর্থায়ন, বাজার তথ্য সরবরাহসহ নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে বলে তিনি জানান।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, তামাক চাষের পরিবশগত ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি রয়েছে।
বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে গঠিত জাতীয় তামাক বিরোধী প্লটফর্ম প্রতিবছর ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক’ প্রদান করে। তামাক বিরোধী কার্যক্রমে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবছর অধ্যাপক ডা: প্রাণ গোপাল দত্তকে ‘ব্যক্তি উদ্যোগ’ ক্যাটাগরিতে, ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন (ইপসা)-কে ‘প্রতিষ্ঠান ’ ক্যাটাগরিতে এবং বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি-কে ‘গবেষণাও প্রকাশনা’ ক্যাটাগরিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক প্রদান করা হয়। এছাড়া, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত গবেষণামূলক কার্যক্রমে উৎসাহ প্রদান করার লক্ষ্যে তরুণ গবেষক সৈয়দা সাজিয়া আফরোজ রুম্পাকে “বিশেষ সম্মাননা” প্রদান করা হয়।

তামাক বিরোধী জাতীয় প্লাটফর্ম এর সমন্বয়কারী ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁঞা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। সেমিনারে ‘‘তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে বিকল্প আয় বর্ধনমূলক ফসল উৎপাদন’’ বিষয়ক উপস্থাপনা প্রদান করেন পিকেএসএফ-এর মহাব্যবস্থাপক (কার্যক্রম) ড. শরীফ আহম্মদ চৌধূরী।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *