ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে পদত্যাগ করছেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক : ব্রেক্সিট প্রশ্নে নিজ দলীয় এমপিদের ঐক্যবদ্ধ করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে। গতকাল ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে এক আবেগঘন বক্তৃতায় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। আগামী ৭ জুন তিনি পদত্যাগ করবেন। খবর বিবিসি।
টেরিসা মে বলেছেন, আগামী ৭ জুন কনজারভেটিভ পার্টির নেতার পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেবেন। নতুন নেতা বাছাইয়ের কাজ এর পরের সপ্তাহেই শুরু হবে।
ডাউনিং স্ট্রিটে দেয়া বক্তৃতায় মে আরো বলেন, বেক্সিট প্রশ্নে জনগণের রায় বাস্তবায়নে এমপিদের বোঝাতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। দুঃখজনক হলো, আমি তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। যুক্তরাজ্যের স্বার্থে এ বিষয়টি এগিয়ে নেয়ার জন্য একজন নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়োজনীয়তা এখন আমার কাছে স্পষ্ট।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের (ব্রেক্সিট) আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। ফলে দলের পক্ষ থেকে চলতি সপ্তাহেই নতুন নেতা নির্বাচনের কাজ শুরু হতে পারে।
উত্তরসূরি বাছাইয়ের ব্যাপারে মে তার বক্তৃতায় বলেন, জানি কনজারভেটিভ পার্টি নিজেই নিজেকে নবায়ন করতে পারে এবং আমরা একটি ব্রেক্সিট চুক্তিতেও উপনীত হতে পারব।
তিনি আরো বলেন, একটি ব্রেক্সিট চুক্তিতে উপনীত হতে ব্যর্থ হয়ে আমি খুবই অনুতপ্ত। আশা করি, আমার উত্তরসূরি একটি ঐকমত্যে পৌঁছতে সক্ষম হবেন। যদি উভয় পক্ষই ছাড় দিতে রাজি হয় তবেই কেবল এ ঐকমত্য সম্ভব। সবশেষে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তার ওপর আস্থা রাখায় যুক্তরাজ্যের জনগণের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মে।
১৯৫৬ সালের ১ অক্টোবর ইংল্যান্ডের সাসেক্সের ইস্টবোর্নে জন্ম টেরিসা মের। মার্গারেট থ্যাচারের পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন তিনি।
এদিকে মের পদত্যাগের ঘোষণার পর তার উত্তরসূরি হিসেবে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম সামনে এসেছে। গতকালই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট দলের নেতৃত্ব দেয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বরিস জনসন, এসথার ম্যাকভি ও ররি স্টুয়ার্টও এরই মধ্যে তাদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তবে কনজারভেটিভ পার্টির ডজনখানেক নেতা এ পদের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েই ভাবছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নতুন নেতা বাছাইয়ের কাজ চলবে কয়েক সপ্তাহ ধরে। পার্লামেন্টে যতদিন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা নির্বাচিত না হচ্ছেন, ততদিন টেরিসা মে-ই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রুটিন কাজ করবেন।
মের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। পদত্যাগ করে মে ‘সঠিক কাজ’ করেছেন বলে টুইট করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন করবিন।
অন্যদিকে টেরিসা মের পদত্যাগ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নিগেল ফারাজ বলেছেন, দুজন কনজারভেটিভ নেতা যাদের অবস্থান ছিল ‘ইইউ’র অনুকূলে, তারা এখন অতীত। এখন হয় এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে, নয়তো দলই টিকবে না।
উল্লেখ্য, টেরিসা মের পূর্বসূরি ছিলেন ডেভিড ক্যামেরন। ব্রেক্সিট গণভোটের সময় তিনি ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রেক্সিট জয়ী হলে পদত্যাগ করেন কনজারভেটিভ পার্টির তত্কালীন এই নেতা।