বিবেকহীন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান: রাষ্ট্রপতি
সিনিয়র রিপোর্টার,
লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক : যেসব বিবেকবর্জিত অসাধু ব্যবসায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
শনিবার বিকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শিল্প মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৭’বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যে ভেজাল মিশিয়ে ও নিম্নমানের পণ্যদ্রব্য বিক্রির মাধ্যমে মানুষের সাথে প্রতারিত করছে। মানুষের সাথে প্রতারণা করবেন না। সৎ ও সাধু ব্যবসায়ীদের জন্য আমাদের সরকারের দরজা সব সময়ই খোলা রয়েছে। আমাদের সরকার অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না।’
ব্যবসাকে একটি মহৎ পেশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইসলামেও ব্যবসাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে আজ সৎ ও ভালো ব্যবসায়ীদের সুনামও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন সুপার স্টোরের পণ্যের গায়ে যখন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা লোগো দেখি, তখন আমি গর্ববোধ করি। কিন্তু আবার যখন ভেজাল বা নিম্নমানের কারণে বিদেশে বাংলাদেশি কোনো পণ্য নিষিদ্ধ হয় বা বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে হয় তখন বাণিজ্যিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি হয়।’
রাষ্ট্রপতি এ সময় কিছু খাবারের মান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সম্প্রতি হাইকোর্ট দেশীয় বাজার থেকে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের পণ্যগুলো প্রত্যাহারে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
আবদুল হামিদ শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মানের সঙ্গে আপোষ না করতে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, কৃষি, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে পাশাপাশি অন্যান্য খাতের মতো দেশের শিল্প খাতে মানসম্পন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক উন্নতি দেখতে পেয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের সময়োপযোগী শিল্প-বান্ধব নীতি ও কর্মসূচির কারণে মানসম্পন্ন শিল্পায়নের একটি অধ্যায় দেশের রপ্তানি আয়কে বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের শিল্পখাত অবদানের কারণে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশে উন্নিত হয়েছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে জিডিপি ৪০ শতাংশে উন্নিত এবং ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকার বর্তমানে বেসরকারি খাত এবং উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদান করছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) এক সংখ্যার সুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।
আবদুল হামিদ দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে এসকল অঞ্চলে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং রপ্তানি বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
দেশের শিল্পখাত তথা জাতীয় অর্থনীতিতে সামগ্রিক অবদান রাখায় ছয়টি ক্যাটাগরিতে ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বৃহৎ শিল্পে প্রথম পুরস্কার স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, দ্বিতীয় পুরস্কার এনভয় টেক্সটাইল, তৃতীয় পুরস্কার অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।
মাঝারি শিল্পে প্রথম পুরস্কার গ্রিন টেক্সাইল, দ্বিতীয় পুরস্কার ডি অ্যান্ড এস প্রিটি ফ্যাশনস, তৃতীয় পুরস্কার জিএমই এগ্রো।
ক্ষুদ্র শিল্পে প্রথম পুরস্কার অকো-টেক্স, দ্বিতীয় পুরস্কার এপিএস অ্যাপারেলস, তৃতীয় পুরস্কার বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস।
মাইক্রো শিল্পে স্মার্ট লেদার প্রোডাক্টস, কুটির শিল্পে প্রথম পুরস্কার কোর দ্য জুট ওয়ার্কস, দ্বিতীয় পুরস্কার প্রতিবেশী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়ন সংস্থা।
হাইটেক শিল্পে প্রথম পুরস্কার সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড, দ্বিতীয় পুরস্কার ন্যাসেরিয়া লিমিটেড।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব মো. আবদুল হাকিম, এনভয় টেক্সাটাইলের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন।