রাজধানীতে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, চিকিৎসকের মৃত্যু
লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক : রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত তিন দিনে ২৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ৪/৫ গুণ বেশি। প্রতিনিয়তই চিকিৎসকের চেম্বার, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দু-এক দিনের উচ্চমাত্রার জ্বর, সঙ্গে কোমর ব্যথা ও চোখ বা মাথা ব্যথা নিয়ে তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
চিকিৎসকরা জানান, এখনই নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ডেঙ্গু মহামারি রূপ নিতে পারে।
এডিস মশাবাহিত সংক্রামক ব্যাধি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একজন চিকিত্সকসহ তিনজন মারা গেছেন। মাত্র দুই দিনের জ্বরেই মৃত্যু হয় ডা. নিগার নাহিদের।
জ্বর আসলে চিকিৎসকরা শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অ্যান্টিবায়োটিক বা এসপিরিন জাতীয় ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিকিত্সকরা বলেন, এ ধরনের ওষুধে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। টানা ৪/৫ দিনে জ্বর না কমলে কিংবা শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিগ্যাল ভয়েসকে জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সার জন্য সরকারি হাপসাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। কিভাবে চিকিত্সা দিতে হবে তার গাইডলাইনও দেওয়া আছে।
তিনি বলেন, সবার সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর না কমলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, গত মে মাসে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ১৯৩ জন, জুনে ১৬৯৯ এবং জুলাইয়ের তিন দিনে ২৫৪ জন।
প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা পেতে হলে এডিস মশা নিধনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। যাদের একাধিকবার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে তাদের ঝুঁকি বেশি।
জ্বর আসলে শুধু প্যারাসিটামল ওষুধ খেতে হবে। ডেঙ্গুর জীবাণু এডিস মশা দ্বারা বাহিত হয়। মশাটি সাধারণত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থির এবং স্বল্প গভীর জলাধারে বংশবিস্তার করে। এছাড়া বাসাবাড়ি ও আঙিনায় জমে থাকা পরিষ্কার পানি, যেমন ফুলের টব, এয়ারকুলার বা ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানি, ফেলে দেওয়া ডাব বা নারিকেলের খোসা, টিনের কনটেইনার, গাড়ির টায়ার ইত্যাদির মধ্যে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। মশাটি শুধু দিনের বেলায় গোধূলিলগ্নেই কামড়ে থাকে। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। একমাত্র সংক্রমিত মশা কামড়ালেই রোগটি হয়।
এদিকে ডেঙ্গুর ছোবল চিকিৎসকদের রেহাই দিচ্ছে না। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ডা. নিগার নাহিদ। মাত্র দুই দিনের জ্বরেই তার মৃত্যু হয়। ধানমন্ডির ১২/এ রোডের বিটিআই একর্ড টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন চিকিত্সক দম্পতি তারিক আকতার খান ও নিগার নাহিদ। তাদের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়ে এসএসসি পাস করেছে। ছেলে দুটি স্কুলে পড়ে।
জানা গেছে, স্বামী-স্ত্রী দুজনই চিকিৎসক হওয়ায় তারা পেশাগত কাজে ব্যস্ত থাকতেন। খুব শান্তশিষ্ট স্বভাবের ছিলেন তারা।
ডা. নিগার নাহিদের সহকর্মীরা জানান, সুস্থ মানুষটি দুদিনের মধ্যে লাশ হয়ে গেল। তার মৃত্যুতে চিকিত্সক পরিবারটির সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেল। ডা. নিগার নাহিদ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।