লি কেকিয়াং-শেখ হাসিনা বৈঠক : পাঁচ চুক্তি ও তিন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
কূটনৈতিক প্রতিবেদক,
লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক : বাংলাদেশ ও চীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অংশ হিসেবে পাঁচটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তার জন্য লেটার অব এক্সচেঞ্জও সই হয়েছে। বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে গতকাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়। খবর বাসস।
অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি এবং পর্যটন বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়। এগুলো হলো সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা স্মারক; ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদের তথ্য বিনিময়সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং তা বাস্তবায়ন পরিকল্পনা; ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি; বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি; ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক; পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি; ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন চুক্তি এবং ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন চুক্তি। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তাসংক্রান্ত লেটার অব এক্সচেঞ্জের আওতায় মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য চীন ২ হাজার ৫০০ টন চাল সরবরাহ করবে।
দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে রাজি করানোর চেষ্টা করবে চীন: এর আগে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চীন মিয়ানমার রাজি করানোর চেষ্টা করবে বলে বাংলাদেশকে আশ্বাস দেন লি কেকিয়াং। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী এ আশ্বাস দেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক।
বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘস্থায়ী এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। চীন এ সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মো. শহিদুল হক চীনের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ে চীনের বন্ধু। চীন এর আগে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দুই দেশকে সহায়তা করেছে এবং আগামীতে এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। দুই দেশকে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান বের করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে লি কেকিয়াং বলেন, চীন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুবার মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে আমরা আবারো আমাদের মন্ত্রীকে মিয়ানমার পাঠাব।
রোহিঙ্গা সমস্যার আশু সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, যতই সময় যাবে এ সমস্যা ততই বড় আকার ধারণ করবে। এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে। মিয়ানমারকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু করার নেই।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রয়াস চালিয়েছি। কিন্তু রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে চায় না। কারণ তারা শঙ্কিত যে তাদের ওপর আবারো নৃশংসতা চালানো হবে। এ শঙ্কা দূর করতে এবং রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে, মর্যাদা ও নিজস্ব পরিচয়ে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে, সেজন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে চীনের ভূমিকা রয়েছে।
এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ এটা বুঝতে পেরেছে যে রোহিঙ্গা সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।