রুশেমা বেগমের বক্তব্য সংগ্রহ করতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান
সিনিয়র রিপোর্টার,
সংসদ ভবন, লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক : বাজেট আলোচনায় সংসদ সদস্য রুশেমা বেগমের দেয়া বক্তব্য সংগ্রহ করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর হবে এবং এটা বেইমান মুনাফেকদের জন্য একটি উচিত শিক্ষা হয়ে থাকবে।
আজ সংসদে সরকারি দলের সদস্য রুশেমা বেগমের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে রুশেমা বেগম বাজেট বক্তৃতায় যে ঐতিহাসিক সত্য তুলে ধরেছিলেন, তা নতুন প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে বিভ্রন্তি দূর হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রুশেমা বেগম তার বক্তৃতায় যে শুধু ইতিহাসের সত্য ঘটনা তুলে ধরেছেন, তাই নয়। যেহেতু তিনি একজন শিক্ষিকা ছিলেন, সেহেতু শিক্ষার বিষয়েও তিনি অনেক পরামর্শ দিয়ে গেছেন। মেয়েদেরকে কিভাবে আরো শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করা যায়, এজন্য উনার অনেক পরামর্শ ছিল। তার বাজেট বক্তব্য বেইমান মুনাফেকদের জন্য একটি উচিত শিক্ষা হয়েছে। এই বক্তব্যটাও আমাদের জন্য একটি প্রেরণা, তার বক্তব্যটা সংগ্রহ করে পড়লে-বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ঘোষণার ইতিহাস এবং সেই সাথে নারী জাগরণ, নারী শিক্ষার উপর অনেক তথ্য জানা ও শিখা যাবে।’
তিনি বলেন, রুশেমা বেগম একজন নিবেদিত প্রাণ মানুষ ছিলেন। মানুষের কল্যাণে তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় মেয়েদের শিক্ষা-দিক্ষা গ্রহণ কঠিন বিষয় ছিল, বৈরি পরিবেশে তিনি শিক্ষা লাভ করে ফরিদপুরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করেছেন।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দেয়ার পর সংসার, সন্তান ও অগণিত নেতাকর্মীদের দেখাশুনার পাশাপাশি ৬ দফার পক্ষে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণায় ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এই আহবানে সাড়া দিয়ে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত নারীদের খুঁজে বের করে পূনর্বাসন, চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে রুশেমা বেগম ও তার স্বামী ইমাম উদ্দিন আহমেদ নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন।
৭৫-এ জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা ও পরবর্তীতে দলীয় নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করেও ইমাম উদ্দিন আহমেদ ও রুশেমা বেগম দলের জন্য কাজ করে গেছেন। নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য তারা কখনো চিন্তা করেননি। মুলত রুশেমা বেগমই সংসার চালাতেন, আর ইমাম উদ্দিন সাহেব যা উপার্জন করতেন, তা দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন।
জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, তিনি একজন মানবতাবাদী, শিক্ষানুরাগী অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। উনার সাথে আমার পরিচয় ছিল না, কিন্তু বাজেটের উপর তিনি যে সুন্দর সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তৃতা করার পর আমি তাকে চিনি।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, রুশেমা বেগম একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষানুরাগী মানুষ ছিলেন। তিনি শুধু নিজে শিক্ষিত হননি, নারী সমাজের শিক্ষার লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। আমাদের উচিত তাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা।
শোক প্রস্তাবের উপর আরো আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শাজাহান খান ও বিরোধী দলের চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা।