নারী ও শিশু নির্যাতনে জড়িতদের বিষয় কঠোর হওয়ার সময় এসেছে- আইনমন্ত্রী
সাইয়্যেদ মোঃ রবিন,
লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক : সামাজিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা যেন উচ্চ আদালত থেকে বেল (জামিন) না পায় সে বিষয়ে সবাইকে মনোযোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রাজধানীর নিবন্ধন অধিদফতর প্রাঙ্গণে বুধবার জেলা ও দায়রা জজ এবং সমমর্যাদার বিচারকদের নতুন গাড়ির চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ অনুরোধ করেন আইনমন্ত্রী।
দেশে শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। অনেক সময় আইনের ফাঁকফোকরে অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এ জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি থাকে এসব বিচার যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। এ ক্ষেত্রে আপনার কোনো উদ্যোগ থাকবে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এসব ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পর বিজ্ঞ বিচারিক আদালতে এ ধরনের মামলাগুলো বিলম্বিত হয় না।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আপনারা নুসরাতের মামলা দেখছেন এবং আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারি এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন (অভিযোগ পত্র) পাওয়ার পর দ্রুততার সাথে সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে। এখন উচ্চ আদালতের কথা বললে আমাকে বলতেই হয়, সেখানে এ পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন ধরনের। আমার কাছে অনেক তথ্য আছে যে বিচারিক আদালতে সাজা হয়েছে বা অত্যন্ত সেনসেশনাল (সংবেদনশীল) মামলা মোকদ্দমায়ও দেখা গেছে যে, উচ্চ আদালতে সেসব আসামিদের জামিন দিয়ে দেয়া হচ্ছে,’বলেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করব। এটার সাথে আমি বলবো যে দেখেন জামিন দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞ বিচারক এবং মাননীয় বিচারপতিদের ডিসক্রেশন। কিন্তু সেই ডিসক্রেশনের মধ্যে কিন্তু একটা কথা আছে। এই ডিসক্রেশনটা ব্যবহার করতে হবে লিগ্যালি। আমি শুধু এইটুকু আবেদন করতে পারি, যে অপরাধগুলো হচ্ছে আমার মনে হয় সময় এসেছে একটু কঠোর হওয়ার, সময় এসেছে এদের জেলখানায় রাখার। সে ব্যাপারে বিচার বিভাগকে আমি কোনো সুপারিশ বা আদেশ দিচ্ছি না। সামাজিক পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে আমি শুধু অনুরোধ করছি, এদিকে যেন সকলের মনোযোগটা হয়।’
বিএনপি নেতারা ভ্রান্তিমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে: বিচারিক বিষয়ে বিএনপি নেতারা ভ্রান্তিমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে উনাদের আইন শেখাতে হবে।’
পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনায় যে রায় দেয়া হয়েছে এ নিয়ে বিএনপি বলে আসছে আইন মন্ত্রণালয় এ রায় লিখে দিয়েছে আর আদালত তা প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে সাংবদিকরা অভিমত জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় উনাদের সময় উনারা এ ধরনের রায় লিখে দিতেন সে অভিজ্ঞতা থেকে এসব বলছেন।
আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি, বিচার বিভাগকে আমরা কোনোভাবেই চাপ দেই না। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন।’
তিনি ঈশ^রদীর ঘটনার ব্যাপারে বলেন, ওনারা (বিএনপি) বলছেন ঈশ^রদীকে কেউ খুন হয় নাই। নয়জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ওনাদের আমি শুধু মনে করিয়ে দিবো অস্ত্র ও বিষ্ফোরক আইনের তিন ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদ- প্রদানে খুন করতে হয়না। কেউ যদি খুন হবে এটা জেনে বোমা ছোড়ে তাহলে তাকে ফাঁসি দেওয়া যায়। আইনের মধ্যে সেটা আছে।
এ সময় আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপি বলে বেড়াচ্ছে খালেদা জিয়া জামিনযোগ্য অপরাধ করেছেন তারপরও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। সকলেই জানেন এতিমের টাকা চুরি করার জন্য খালেদা জিয়াকে বিজ্ঞ বিচারিক আদালত পাঁচ বছর জেল দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট সে রায়ের আপিলে আরও ৫ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের জেল দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এতিমখানার টাকা আত্মসাতের জন্য আবার বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের জেল দিয়েছেন। সেটাও জামিনযোগ্য নয়। তার পরও বিএনপি সব সময় ভ্রান্তিমূলক তথ্য জনগণকে দিচ্ছেন। তারা যে মিথ্যার ওপর রয়েছেন এগুলো সেটারই প্রমাণ।’
সরকার সুশাসনের ব্যাপারে একটা দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে: অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সুশাসনের ব্যাপারে একটা দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তার সরকার সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ যাতে বিচার পায় এবং সেখানে বিচারকরা যাতে নির্বিঘেœ সেবা দিতে পারেন সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রত্যেক জেলায় আট বা দশ তলা বিশিষ্ট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ, পূর্বের ২তলা বিশিষ্ট জেলা জজ আদালত ভবন গুলো চার বা পাঁচ তলা পর্যন্ত উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ। এগুলোর সবকিছুই করা হয়েছে বিচারকদের এজলাস সংকট দূর করার জন্য। কারণ ২০০৯ সালের পূর্বে বিচারকরা এজলাস শেয়ার করে বিচার কাজ করতেন। ফলে জনগণের বিচার পেতে বিলম্ব হতো।
তিনি বলেন, অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বর্তমানে বিচারকদের এজলাস সংকট প্রায় সম্পূর্ণ দূর করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারকদের লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বিচারকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ১১৫ টি গাড়ি দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেও ৬৭টি গাড়ি দেওয়া হবে।
আনিসুল হক বলেন, আগে একজন বিচারক রিক্সায় চরে চলাচল করতো। এটি তাদের কাজের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। তিনি বলেন, বিএনপি আমলে সারা বাংলাদেশের ৬১টি আদালতে বোমা হামলা হয়েছে এবং সেই বোমা হামলায় দুই জন বিচারক হতাহত হয়েছেন। এই সব কিছু বিবেচনা করে জনগণ যাতে সুষ্ঠু বিচার পায়, বিচারকার্য যেন বিলম্বিত না হয়। সেইজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আমরা বিচারকদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছি।
আইনমন্ত্রী বলেন, সারা দেশের সকল জেলা জজ ও সম মর্যাদার বিচারকদের গাড়ি দেওয়া হয়েছে। এখন অতিরিক্ত জেলা জজদের গাড়ি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বাজেট থেকে ৬২ জন অতিরিক্ত জেলা জজকে গাড়ি দেওয়া হয়েছে।
চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেও ৬৭টি গাড়ি ক্রয় করা হবে। যা অবশিষ্ট অতিরিক্ত জেলা জজদের দেওয়া হবে। সারা দেশে বর্তমানে ১২৮ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা