নিরীক্ষা সহজ করার উদ্যোগ এনবিআরের
স্টাফ রিপোর্টার,
লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক :
বর্তমানে ভ্যাট, ট্যাক্স ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে কোম্পানির হিসাব নিরীক্ষা করে। এতে সময়ক্ষেপণ হয় বেশি, হয়রানিও বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে নিরীক্ষা কার্যক্রম সহজ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিডার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তিন ধাপের বদলে এক ধাপে নিরীক্ষা শেষ করা যায় কিনা, সে উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
ইজ অব ডুয়িং বিজনেস নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের প্রতিবেদনে কর প্রদান সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতির জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের লক্ষ্যে ৮ জুলাই এনবিআর, ব্যবসায়ীদের সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি সভা করেছে বিডা। ওই সভায় ব্যবসা সহজীকরণে বেশকিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। যার মধ্যে রয়েছে তিন ধাপের পরিবর্তে এক ধাপে নিরীক্ষা করা, ঝুঁকি নিরীক্ষার ভিত্তিতে করপোরেট কর নির্ধারণ, কর প্রদানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা ও ভ্যাট রিফান্ডের সময় কমানো। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য গত রোববার এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বিডা।
বিডার লোকাল ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন বিভাগের মহাপরিচালক তৌহিদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতির জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে কর্মপরিকল্পনা ব্যবসায়ী ও করদাতাদের উপকারে আসছে কিনা, তার প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে জরিপ সম্পন্ন করে ওই বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে। ব্যক্তি ও কোম্পানি করদাতারা সরাসরি ট্যাক্স পরিশোধের জন্য আলাদা কোড এবং সব ধরনের ট্যাক্সের জন্য একক কর্মপন্থা নির্ধারণ ২৪ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে নিরীক্ষায় সময়ক্ষেপণ ও হয়রানি কমাতে ভ্যাট, ট্যাক্স ও কাস্টমস বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে একক নিরীক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং সর্বজনীন ডাটাবেজ করার কর্মপরিকল্পনা নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আন্তর্জাতিক হিসাব মান মেনে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। ওই চিঠি পাওয়ার পর নিরীক্ষা সহজীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নিরীক্ষা সহজীকরণের বিষয়টি আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। এছাড়া কর প্রদান সহজীকরণে এনবিআর ও বিডা সমন্বিতভাবে বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তবে ঝুঁকির ভিত্তিতে ব্যবসায় করপোরেট ট্যাক্স কমানো এখনই সম্ভব নয়। আগামী বাজেটে বিষয়টি দেখা হবে। আর নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। তাই ভ্যাট পরিশোধ করা ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সহজ হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসা করার পরিবেশ নিয়ে প্রতি বছর সমীক্ষা ও প্রতিবেদন বা ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। ব্যবসা করার পরিবেশ বিবেচনায় বিভিন্ন দেশের বৈশ্বিক র্যাংক ও বিভিন্ন সূচকে অবস্থান প্রকাশ করা হয়। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এ ডুয়িং বিজনেস সূচকে কোন দেশের কী অবস্থান, তা বিবেচনায় রাখেন।
সর্বশেষ প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বা সহজে ব্যবসা করার সূচকে মাত্র এক ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বব্যাংকের র্যাংকিংয়ে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার ডুয়িং বিজনেস সূচকে উন্নয়নের ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২১ সালের মধ্যে অন্তত ৯৯তম অবস্থানে আসার।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে ট্যাক্স প্রদান সহজীকরণ বিষয়ে বিডায় বৈঠক হয়েছে।
সেখানে তিন ধাপের পরিবর্তে এক ধাপে নিরীক্ষা করার জন্য এনবিআরকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো বেশকিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এনবিআর কিছু বিষয় বাস্তবায়ন করেছে। অন্যগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছে।