জনশক্তি রফতানিকারকদের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ
রাকিবুজ্জামান,
লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলার আগে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) অথবা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) কাছ থেকে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে নেয়, সে বিষয়ে আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
এছাড়া জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানব পাচার ও দমন আইন ২০১২-এর আওতায় এ ধরনের মামলা না করারও অনুরোধ করেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে চিঠি লিখে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে জানানো হয়, ১৯৮২ সালের বহির্গমন আইন এবং ২০০২ সালের এসআরও নং-৩৭১-এর আইনগুলো সংশোধন করে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ তৈরি করা হয়।
এ আইনের আওতায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মী রফতানি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কর্মী রফতানির জন্য সরকার ১ হাজার ৪০০টিরও বেশি জনশক্তি রফতানিকারককে লাইসেন্স দিয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সদস্য। এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশে জনশক্তি রফতানির সময় সংশ্লিষ্ট দেশে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে চাহিদা ও কর্মী ভিসা সংগ্রহ করে।
পরে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে সেগুলো যাচাই করা হয়। যাচাই শেষে তা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) দাখিল করা হয়।
চিঠিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে বলা হয়, এসব জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার ছাড়পত্রের আবেদন করে। একই সঙ্গে প্রতিটি কর্মীর জন্য সরকারের নির্ধারিত বিভিন্ন ফিও দিয়ে থাকে। এসব কর্মীর মধ্য থেকে বাছাই ও পাসপোর্টের অন্যান্য তথ্য নিশ্চিত করে বিএমইটি বিদেশ যাওয়ার ছাড়পত্র দেয় এবং প্রতিটি কর্মীর জন্য স্মার্ট কার্ড ইস্যু করে। এরপর বিদেশে কর্মীদের চাকরিস্থলে কোনো সমস্যা হলে দূতাবাস মন্ত্রণালয় ও বিএমইটির নির্দেশনা অনুযায়ী জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের সমস্যা সমাধান করে।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানান, যদি কোনো কারণে কর্মী বিদেশ থেকে ফেরত আসে অথবা কর্মস্থলে কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তখন নিবন্ধিত ভুক্তভোগী কর্মী থানাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে সংশ্লিষ্ট জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ করেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো ২০১৩ সালের অভিবাসী আইন অনুসরণ না করে কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২-এর অধীনে মামলা করে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয়রানি, গ্রেফতার এবং তাদের কার্যালয় তল্লাশি করে পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। ফলে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত ভয়ভীতির মধ্যে থাকে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হয়রানির শিকার হয়।
প্রসঙ্গত, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২-এর ৫ ধারায় বলা রয়েছে, এ আইন অভিবাসন ও বহিরাগমন বিষয়ক অন্যান্য প্রচলিত আইনের পরিপূরক হবে এবং সেগুলোর ব্যত্যয়ে ব্যবহূত হবে না।
মন্ত্রী জানান, সব অভিযোগের ক্ষেত্রে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ অনুসরণ না করে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২-এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। ফলে জনশক্তি রফতানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিদেশে জনশক্তি রফতানি ব্যাহত হচ্ছে ও হ্রাস পাচ্ছে। এতে করে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যাতে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে জনশক্তি রফতানি খাতের স্বার্থে বিদেশ ফেরত আসা স্মার্টকার্ডপ্রাপ্ত কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করার আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি অথবা বায়রার মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন