বঙ্গবন্ধু স্বপরিবার হত্যাকান্ডে জড়িত নেপথ্যে নায়কদের মুখোশ উন্মোচনে ‘কমিশন’ গঠনের দাবি তথ্যমন্ত্রীর
স্টাফ রিপোর্টার,
লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যদের নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত নেপথ্যে নায়কদের মুখোশ উন্মোচনে ‘কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
আজ রাজধানীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় যোগদান শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের নীল নকশা প্রণয়নের ষড়যন্ত্রকারী নেপথ্যের নায়কদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা শুধু ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানকে নয়, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের উদ্যোগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এর আগে সকালে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যারা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় চায়নি, এদেশ স্বাধীনতা পাক তা চায়নি – সেই বিদেশী চক্র এবং যারা স্বাধীনতার পরও পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করার চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে।’
বঙ্গবন্ধুকে চিরঞ্জীব উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তা পারেনি। বঙ্গবন্ধু ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন আর সেই ষড়যন্ত্রকারীরাই মুছে গেছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আমলে দেশের প্রচলিত বিচার পদ্ধতিতেই ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, কোনো জিঘাংসা থেকে নয়। বিচার সম্পূর্ণ হয়নি, কারণ, পলাতক খুনি ও বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কুশীলবদের বিচার এখনো হয়নি। এজন্য একটি কমিশন গঠন করে বিচার সম্পন্ন করা উচিত, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও বিচার প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
ড. হাছান বলেন, আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন তাহলে বাংলাদেশ অনেক বছর আগেই সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতো।
তবে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সমসাময়িক বিষয়ে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘শোক দিবসে অন্য বিষয়ে কথা বলতে চাই না, এ সত্ত্বেও আপনারা প্রশ্ন করেছেন বিধায়ই উত্তরে বলছি, লক্ষ্য করলে দেখবেন, দেশে গত দশ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে পশু কোরবানি দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় ট্যানারির সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেনি, যদিও অনেক চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বেড়েছে। সম্প্রতি চামড়া শিল্প মালিকরা চামড়া রপ্তানির বিরোধিতা করেছেন, সেক্ষেত্রে যদি তারা নিজেরা সব চামড়া কিনে নেবার ঘোষণা দিতেন, তাহলে চামড়া দর পতন রোধ হতো।’
সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা, সর্বোপরি জনগণ ও রাষ্ট্রের কথা বিবেচনা করে’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘তবে সরকার এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক বিধান চন্দ্র কর্মকারের সভাপতিত্বে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক, অতিরিক্ত সচিব মো. আজহারুল হক, জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক শাহিন ইসলাম, চলচ্চিত্র গবেষক রফিকুজ্জামান, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু ও সাংবাদিক শ্যামল সরকার সভায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জাকির হোসেন, ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নিজামুল কবীর, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী আব্দুস সামাদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানাসহ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ববর্গ সভায় অংশ নেন।