বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের আয়কর ফাইলের বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধানে এনবিআর
সাইদুর রনি,
লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
অপেক্ষাকৃত দামি বা বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের আয়কর ফাইলের বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধানে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগ। প্রাথমিকভাবে কর বিভাগ ১ হাজার বিলাসবহুল গাড়ির মালিকের তথ্য বিআরটিএর (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এসব গাড়ির মালিকের আয়ের উৎস্য, গাড়ি ক্রয়ের অর্থের উত্স, কী কী সম্পদ আছে, ঐ সম্পদের সঙ্গে কর ফাইলে দেওয়া আয়ের তথ্য ঠিক আছে কি না—তা যাচাই করা হবে। এছাড়া কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের কত অংশ গাড়ি কেনায় ব্যয় করা যাবে, তা মানার একটি শর্ত রয়েছে। কোম্পানিগুলো তা মেনেছে কি না, এসব বিষয়ে ঐ কোম্পানিরও বিস্তারিত আয়-ব্যয়ের তথ্য নেওয়া হবে।
এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিআরটিএ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা ১ হাজার গাড়ির মালিকের স্ব-স্ব কর অঞ্চলের কর অফিসে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিতে আলাদা চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাঠ পর্যায়ের কর অফিসগুলো বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করেছে।
এনবিআরের কর বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, দামি গাড়ি ব্যবহারকারীদের কর ফাইলে দেওয়া তথ্য অনেক সময় তাদের আয় ও জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয় না। এ ধরনের গাড়ির ব্যবহারকারীদের যে আয় থাকার কথা, কর ফাইলে তা দেখা যায় না। আমরা ধারণা করছি, সঠিকভাবে অনুসন্ধান চালালে তাদের আয়, ব্যয় ও সম্পদের অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ টাকা থেকে ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত দামের গাড়ির মালিকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া শুরু হবে। অবশ্য এ তালিকার আওতায় সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত-সুবিধায় আনা গাড়ি নেই।
যোগাযোগ করা হলে এনবিআর সদস্য মেফতা উদ্দিন খান এ অনুসন্ধানের সত্যতা স্বীকার করেছেন। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, যারা বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করছেন, তাদের অনেকেরই আয়কর ফাইলে দেওয়া তথ্য নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। বিআরটিএর কাছ থেকে এরকম প্রায় ১ হাজার গাড়ির মালিকের তথ্য সংগ্রহ করে কর অফিসগুলোতে যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রদত্ত তথ্য, টাকা কোথায় পেল, তার কর ফাইলে কী দেখানো রয়েছে, কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা যাচাই বাছাই করা হবে।
বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ পর্যন্ত গাড়ি কেনায় ব্যয় করা যায়। অন্যদিকে গাড়ির অবচয়নের ভিত্তিতে ক্রয়ের একটি সীমারেখা দেওয়া রয়েছে। এসব নিয়ম মানা হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধান করা হবে।
এনবিআর আয়কর বাড়ানো নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (ই-টিআইএন) বাড়ছে। কিন্তু এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয়করের হিসাব জমা দেওয়ার হার বা রিটার্ন দাখিল কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। এনবিআরের হিসাবে বর্তমানে ই-টিআইএনধারী ৪০ লাখ হলেও এর অর্ধেকের বেশিই রিটার্ন জমা দেন না।
অন্যদিকে যারা রিটার্ন জমা দেন, এর মধ্যেও বড়ো অঙ্কের আয়কর ফাঁকির অভিযোগও দীর্ঘদিনের। গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে টিআইএন জমা দেওয়া ও রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।