শুভ জন্মদিন ড. এ. কে আব্দুল মোমেন
লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর : যাদের কাজ, চিন্তা ও মূল্যবোধ মানুষের জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে যায়, তারা মানুষের জীবন ও চেতনায় থেকে যান সারাজীবন। ড. এ. কে আব্দুল মোমেন তাদেরই একজন। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের আহ্বানে রাওয়ালপিণ্ডিতে রাউন্ড টেবিল বৈঠকে যোগদান করেন। সে সময়ে ড. মোমেন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক সহকারী। আর ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে তার প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘে পাঠান।
অধ্যাপক ড. এ. কে আব্দুল মোমেন ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে (২৩ আগস্ট) সিলেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ছিলেন বরেণ্য রাজনীতিক, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী। ড. মোমেন হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ এবং নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় (বোস্টন) থেকে এমবিএ ও অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
এর আগে তিনি সিলেট সরকারি পাইলট হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন, আর এইচএসসি পাশ করেন এমসি কলেজ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ ডিগ্রী নেন; আইন শাস্ত্রে এলএলবি ডিগ্রীও অর্জন করেন তিনি। মেধাবী হওয়ায় শিক্ষাজীবনের প্রতিটি স্তরেই লাভ করেন বিভিন্ন ধরনের স্কলারশীপ।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাবস্থায়ই তিনি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ২৩ মার্চের পর কাজ ছেড়ে চলে যান। বাংলাদেশ দখলদার মুক্ত হলে পরে তিনি তৎকালীন আঞ্চলিক প্রশাসক দেওয়ান ফরিদ গাজীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন।
ড. এ. কে আব্দুল মোমেন তখন কাজ করছেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান গাজীর একান্ত সচিব হিসেবে। ১৯৭৩ সালে ইংল্যান্ডে গেলেন সরকারি একটা কাজে। সে সময় লন্ডনপ্রবাসী সিলেটীরা দেশ পুনর্গঠনে অতি উৎসাহী। এরাই বাংলাদেশ বিমান চালু করেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান দেন। বিদেশী সহায়তার বিষয়টি আলোচনায় আসলে তারা জানালেন যে, সরকার যদি তাদের নিজ নিজ তহবিল দিয়ে দ্রব্য সামগ্রী আনতে অনুমতি দেয়, যেমন শিশুদের জন্য গুঁড়ো দুধ, ব্লেডসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, তাহলে তারা তা আনতে পারবেন। এতে দেশের মূল্যস্ফীতি কমবে, দেশের মানুষ প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত পণ্য পাবে।
তিনি দেশে ফিরে বিষয়টি প্রস্তাব আকারে মাননীয় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান গাজীর মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠান। তবে তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী এবং ওই মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বরত সচিব জনাব নুরুল ইসলাম তা নাকচ করে দিলেন। প্রস্তাবনাটি আঁতুর ঘরেই বিনস্ট হয়ে গেলো। এতে খানিকটা কষ্ট পেলেন ড. মোমেন। তবে তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নয়। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে আবার প্রস্তাবনা পাঠানো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এবারও সচিব সাহেব নাকচ করে দিলেন। সচিবের যুক্তি ছিল, প্রস্তাবনাটি গৃহীত হলে কেবল কয়েকজন সিলেটি প্রবাসী উপকার পাবে, তাদের বাণিজ্য হবে। দেশের কিছু হবে না। এমন অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে মর্মাহত সবাই।
তবে দমবার পাত্র নন ড. মোমেন। একদিন তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর প্রতিমন্ত্রী সহকারে দলবল নিয়ে চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। বিকালের ওই সময়ে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে আলাপ করছিলেন আর পুকুরে মাছের খাবার ছিটাচ্ছিলেন।
আমাদের দেখে তিনি বলে উঠলেন, দেওয়ান সাহেব, কি খবর! দলবল নিয়ে হাজির হয়েছেন। সে সময়ে প্রতি ছয়মাস পর পর রেডিও- টিভি মারফতে বাণিজ্য নীতি ঘোষণা করা হতো। নীতি ঘোষণার তখনও দুদিন বাঁকি। দেওয়ান ফরিদ গাজী বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরতে বললেন।
ড. মোমেন বিনয়ের সাথে বললেন, আমাদের দেশে গুঁড়া দুধের খুব অভাব। গরুর দুধের যোগানও সীমিত। অথচ বাচ্চারা দুধের অভাবে কষ্টে ভুগছে। এর মাধ্যমে দেশের বাইরে থেকে আমরা সহজেই গুঁড়া দুধ আনতে পারবো। আমরা বলতে প্রবাসীরা নিজেদের টাকায় নিয়ে আসবে। এতে আমাদের নিজস্ব কোনো খরচ হবে না। এর মাধ্যমে শিশুরাও গুঁড়া দুধ পাবে।
বঙ্গবন্ধু শুনে আঁতকে উঠলেন। বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলেন, কি বলো? শিশুদের খাবারও আটকে দিয়েছে? কেন হবে না এটা? তখনই বাণিজ্য সচিবকে ডাকা হলো। সচিবকে তিনি নির্দেশ দিলেন, এটার অনুমোদন দিয়ে দিতে। বললেন, আমাদের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের মেধার বিকাশ দরকার। ঠিকঠাক খাবারদাবার দরকার। স্বাধীনতা পরবর্তীতে নানা সংকট নিয়ে দেশ চালাতে হচ্ছে। এমন উদ্যোগের মাধ্যমে যদি শিশুদের জন্য খাবারসহ প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য আসে, তাতে মন্দ কী। প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলো, যা পরিচিত ওয়েজ আর্নার স্কীম নামে।
স্বস্তির একটা আভা ছড়িয়ে পড়লো ড. মোমেনের মুখে। তিনি খুশি হলেন। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তার এমন প্রচেষ্টা সবসময়, যা শুরু হয়েছে সেই কিশোর কাল থেকেই, চলছে আজ অবোধি।
বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আওয়াজ তোলায় ১৯৮২ সালের সামরিক সরকার ড. মোমেনকে ‘পি-ও-ওর্ডার-৯’ অধ্যাদেশ বলে চাকরিচ্যুত করে। এর পর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কমিটি ফর ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ’। পরে তিনি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইটি, নর্থ ইষ্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সেলেম স্টেট ইউনিভার্সিটি, মেরিমেক কলেজ, কেম্ব্রিজ কলেজ, ম্যাসাচুচেস্ট ইউনিভার্সিটি এবং পরবর্তীতে ফ্রেমিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘ ২৩ বছর শিক্ষকতা করেন। কাজ করেন অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে। অভিজ্ঞতা রয়েছে ইউএনডিপির কনসালটেন্সির। ২০১৬ সালে তিনি ‘সাউথ সাউথ কর্পোরেশন, ফাইনান্সিং ফর এসডিজি’ এর উপর একটি গবেষণাধর্মী রিপোর্ট প্রকাশ করেন।
তিনি প্রায় পাঁচ বছর রিয়াদে সৌদি সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সৌদি (ইন্ডাস্ট্রিয়েল ডেভলপমেন্ট অথোরিটি) ইকোনোমিক অ্যাডভাইজার বা কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেন। সেই সময় তিনি সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের উপর অমানবিক ব্যবহার বন্ধের জন্যে আন্দোলন শুরু করলে কিছু সংখ্যক আদম ব্যবসাহী তার বিরোধীতা করে।
সেই সময়ে বিরোধী দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তাকে অভয় দেন এবং তার প্রচেস্টার ফলে শত শত শ্রমিকের উপর আত্যাচার বন্ধ হয়। এর ফলে কোম্পানীগুলো তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা বা মজুরী দিতে বাধ্য হয়। তাছাড়া ৫০ ডিগ্রী তাপমাত্রার অধিক তাপমাত্রা হলে শ্রমিকদের উন্মুক্ত স্থানে কাজ করা বা বদ্ধ ভ্যানগাড়ীতে পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। আইন না মানলে ভূক্তভোগী শ্রমিকদের ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগেনাইজেশন’ এর দেওয়া ক্ষতি পূরণ দাবি করতে পারার নীতিও গৃহীত হয়।
বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুবিধ প্রচেস্টা চালান এবং ১৯৮৮ সালে তার উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বাংলাদেশের উপর এক শুনানীর আয়োজন করা হয়। যা এরশাদ সরকারের অবস্থানকে দূর্বল করে। তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস, সিনেট ও সরকারে “মিস্টার বাংলাদেশ” নামে পরিচিতি লাভ করেন। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর তাকে “Ambassador of Good will” উপাধিতে ভুষিত করেন।
পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে মহিলা ও শিশু পাচার বন্ধ ও তাদের অমানবিকভাবে ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার না করার জন্যে বিশেষ করে উটের দৌড়ে কচি শিশুদের ব্যবহার বন্ধের জন্যে তিনি বিশ্বব্যপী আন্দোলন শুরু করলে মার্কিন সরকারের চাপে তা বন্ধ হয় এবং তিনি অনেক মহিলা ও শিশুদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনেন।
১৯৮৭ সালে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকা সফর করলে তার উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে “বঙ্গবন্ধু পরিষদ” গঠিত হলে তাকে এবং ড. এনায়েত রহিমকে যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয়। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন ড. মোমেন। দায়িত্বপালনকালে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা আর দক্ষতায় অনেক জটিল বিষয়ের সমাধান নিয়ে আসছেন সহজভাবে। তার নেতৃত্বে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা আরও সুসংহত হচ্ছে।
জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই তিনি নৈতিকতা ও সুবিচারের মাপকাঠিতে তার কাজকর্মকে সংঘটিত করেন। তখন দেশের মানুষ তাকে জানল একজন বিবেকবান, প্রাজ্ঞ ও দক্ষ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে; একজন স্থিতধী, নীতিমান প্রশাসক হিসেবে। পরবর্তীতে শিক্ষকতায় থাকাকালীন উন্নয়ন-অর্থনীতিসহ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা-অধ্যাপনা করে খ্যাতিমান হয়ে উঠেন। সৃষ্টিশীল একাডেমিক চর্চার পাশাপাশি এ বিষয়ে মৌলিক কিছু জ্ঞানও সৃষ্টি করেন।
তার সচেতনতা, কর্মস্পৃহা আর নৈতিকতার কারণে কোনো বিতর্ক তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। যা সম্ভব হয়েছে তার নিরপেক্ষতার সততা, আইনের শাসনের প্রতি নিষ্ঠা আর প্রশাসক হিসেবে তার কুশলতার জন্য। তার সহকর্মীদের নিয়ে তিনি একটি চমৎকার ও গতিশীল কর্মব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছেন সবসময়। বরাবরই তিনি ক্ষমতার বলয়ে পরিবেষ্টিত, কিন্তু ক্ষমতাকে তিনি শিরোস্ত্রাণের মতো পরেননি; বরং পরেছেন একজন সেবিকার অ্যাপ্রনের মতো, যা সেবা ও নিষ্ঠার প্রতীক, যা দেখে মানুষ আস্থা পায়।
ড. মোমেন তার গবেষক সত্তাটিকে কখনোই আড়ালে রাখেননি। কিশোর বয়সে ‘উষশী’ পত্রিকা সম্পদনার মধ্য দিয়ে যার যাত্রা শুরু, তা অব্যাহত এখন পর্যন্ত বয়সের হিসাবে আমরা যাকে পরিণত বলি। সারা কর্মজীবনে অনেক গবেষণা করেছেন, বই লিখেছেন, সমসাময়িক নানা বিষয় তুলে ধরেছেন, সরকারে থেকেও সরকারের নানা বিষয়েই গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
চমৎকার ভাষায় তিনি লিখেন এবং প্রতিটি লেখাই তথ্যবহুল।
লেখালেখির বিষয়ও বিচিত্র, কোরআন সূত্র থেকে নিয়ে প্রবচন, রবীন্দ্রনাথ থেকে নিয়ে সমাজ, অসঙ্গতি থেকে শুরু করে কূটনৈতিক দর্শন। কিছু লেখার আগে তিনি পড়েন, প্রচুর পড়াশোনা করেন। নিদারুণ কর্মব্যস্ততায় এখন তার আক্ষেপ, হায় পড়ার সময়টা আর পাচ্ছি না।
তার সঙ্গে কাজের সুযোগ পাওয়া নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের। কাজে অকাজে এখন প্রতিনিয়তই তার সঙ্গে কথা হয়। এসব কথার কেন্দ্রে থাকে সাহিত্য, দর্শন, সমাজ ও মানুষ নিয়ে তার ভাবনা। সাতচল্লিশে দেশ ভাগের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন নীতি ও অহিংস বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি, স্বৈরশাসন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন, জাতিসংঘসহ মোড়ল দেশগুলোর বিশ্বনীতি নিয়েই নতুন তথ্য পাই ড. মোমেনের কাছে প্রতিদিন।
পাশাপাশি কার্লাইল, বার্নার্ড শ থেকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ, শামসুর রাহমান- কত বিষয়েই যে তিনি কথা বলেন, আমি প্রতিনিয়ত অবাক হই। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। দৈনন্দিন আলাপচারিতার প্রতিটি বিষয়েই তার অগাধ পাণ্ডিত্য, এ যেন হাজারো বিষয়ের এক ‘জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া’। এই সময়ের ভাষায় যা ‘জীবন্ত গুগল’।
এই সমাজে ক্ষমতার বলয়ে থেকে তার অতিরঞ্জিত ব্যবহার না করা, নানা প্রতিবন্ধকতা আর চ্যালেঞ্জসহ ঘাড়ের মাথায় উঁচু, শক্ত শিরদাঁড়া আর স্বচ্ছ বিবেকের খুব বেশি মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমার স্বল্প জীবনে যাদের পেয়েছি, তাদের ছায়ায় মাঝেমধ্যে গিয়ে দাঁড়িয়েছি, মনে হয়েছে একজন আছেন আমাদের ওপর ছায়া মেলে, তিনি ড. এ. কে আব্দুল মোমেন। নিরাপত্তার ছায়া মেলে বটবৃক্ষের মতো উদার হয়ে রয়েছেন তিনি, তাই তো প্রতিদিনের ভুলে ভরা জীবনেও নির্ভরতা আর অভয় পাই তার কাছে।
সহজ-সরল, শিশুসুলভ মন ড. মোমেনের। তার রয়েছে সূক্ষ্ম রসবোধ, কঠিন বিষয়ের মাঝেও তিনি মজা করেন, যা উপস্থিত সবাইকে খানিকটা নির্ভার করে তোলে। সবার সঙ্গে সমানভাবে মিশেন, পার্থক্য করেন না এতটুকু। যেমন আমি ভাবতাম, আমার সঙ্গে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ভেবে খুব আনন্দ ও গর্ববোধ করেছি। পরে দেখি, সবার সঙ্গেই তাঁর এমন বিশেষ সম্পর্ক। সবাই খুবই খুশি।
মানবজীবন সম্পর্কে তার ব্যাপক কৌতূহল ও পাণ্ডিত্য তার অসাধারণ। ফলে এত বিচিত্র বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান আর জানাশোনা। তিনি জানেন এবং জানাতে ভালোবাসেন। কাউকে ছোট-বড় বলে ভাবেন না। মনে করেন, সবার কাছেই তাঁর কিছু জানার আছে, সবাই তাকে কিছু না কিছু বলতে পারে। তিনি সেই কথা শুনেন, সমন্বিত করে তুলে ধরেন।
জীবন সায়াহ্নে আরও নতুন একটি বছরে পদার্পন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেনের শুভ জন্মদিন স্যার।
লেখক- মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব।