এবার শান রাজ্যে মিয়ানমার সেনাদের তাণ্ডব
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর : মিয়ানমারের শান প্রদেশেও তাণ্ডব শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে প্রদেশজুড়ে, পালাচ্ছে হাজারো মানুষ। এর আগে রাখাইনেও এভাবেই তারা তাণ্ডব চালিয়ে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছিল।
আজ সোমবার এমন তথ্যই জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশটির শান প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় প্রায়ই প্রদেশটির ওইসব বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে কিছু সময়ের মধ্যেই ওইসব সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রেণেও চলে আসে।
তবে এবারের সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন প্রদেশটিতে বসবাস করা সাধারণ মানুষ। যারাও আছেন, দেশটির সেনাবাহিনীর তাণ্ডবের মুখে তাদেরও আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রদেশটির বিভিন্ন সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে চালানো বিদ্রোহীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১৫ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই সেনাবাহিনী-বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যকার সংঘর্ষ ভিন্ন মাত্রা পায়।
স্থানীয় নাগরিক সমাজের কয়েকটি সংগঠন জানিয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় প্রদেশটি থেকে পালিয়ে গেছেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ।
আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা বা-ই (৬৩) নামে এক সাবেক শিক্ষক বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানান, তারা এখনো ঘরে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
‘প্রায় সময়ই আমি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আমি এসব থেকে দূরে কোথাও চলে যেতে চাই’ যোগ করেন তিনি।
মিয়ানমারের শান প্রদেশে টহল দিচ্ছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
১৮ বছর বয়সী লিয়াও আয়ে পিন্ট নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ঘরে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেও কোনো কাজ হবে না। যাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ আমার বাড়ি যে গ্রামে, সেখানকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ নয়।’
জাও মিন তুন নামে দেশটির সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, আমরা শান প্রদেশে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। বন্ধ হয়নি সংঘর্ষও।
চীন সীমান্তে অবস্থিত শান প্রদেশে কয়েক দশক ধরেই সশস্ত্র সংঘাতের ঘটনা ঘটে আসছে। ২০১৬ সালে অং সান সুচি ক্ষমতায় আসার পর শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। যদিও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনও দেখা যায়নি।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতিতে প্রকাশিত ২২ আগস্টের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ), আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এ সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে দেশটির সেনাবাহিনী। ১৫ আগস্টের হামলার পেছনেও ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোই আছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।
এদিকে রোববার (২৫ আগস্ট) মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা শান প্রদেশ থেকে প্রায় ৭৬২ কেজির মতো মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। যেগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ১২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। এর আগে গত ২২ আগস্ট-ও প্রায় সাত মিলিয়ন ডলারের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছিল প্রদেশটি থেকে।
অন্যদিকে এসব ঘটনার জেরে নিজেদের নাগরিকদের মিয়ানমারের শান প্রদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।