বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো প্রবাসীদের আদৌ কতোটা সেবা দেয়
সিনিয়র রিপোর্টার,
লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভেতরে এক ব্যক্তিকে মারধর করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাদের প্রবাসীদের প্রতি আচরণ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসব দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করতে যান তাদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ থাকে যে, তারা সেখানকার দূতাবাস থেকে ন্যূনতম সহায়তাটুকু পান না।
“যে কাজ একবারে করা যায়, ওইটা ঘুরায় ঘুরায় করবে”
পাঁচ মাস আগে সৌদি আরবে কাজ করতে গেলেও দেশটির আবহাওয়া এবং কাজের চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না রানী দাস।
এমন অবস্থায় তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইলেও দূতাবাস থেকে তাকে কোন ধরণের সহায়তা করা হয়নি।
তার মতো এমন ছয়জন নারীকে এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে খেতে হচ্ছে বলে জানান রানী দাস।
দেশে ফিরতে পারলেও কাজের পুরো পারিশ্রমিক ছাড়াই ফিরতে হয়েছে দিনাজপুরের মোর্শেদা বেগমকে। প্রায় দেড় বছর সৌদি আরবে কাজ করলেও বেতনের মাত্র অর্ধেক তুলতে পেরেছেন তিনি।
“অ্যাম্বাসিওয়ালা মনে করেন জেলখানা থেকেও বেশি কষ্ট দেয়। যে কাজ একবারে করা যায়, ওইটা ঘুরায় ঘুরায় করবে। আমাদের টাকা কেমনে পাব, কোন খোঁজ নেয়না, আমরা কী খাই, কেমনে আছি। বাংলাদেশে তো কল করা যায়না। আমি বাঁইচা আছি না মারা গেছি এইটা বাংলাদেশের কেউ জানেনাই এতদিন।”- বলেন মোর্শেদা বেগম।
প্রবাসে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন।
দূতাবাসের ভেতরে মারধর
ব্রুনেই দূতাবাসে নির্যাতনের সর্বশেষ যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে দেখা যায়, এক প্রবাসী ব্যক্তিকে দূতাবাস কর্মকর্তার সামনেই একে একে কয়েকজন মারধর করছে।
মারধরের শিকার ওই ব্যক্তি একজন দালাল এবং তাকে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরাই পেটাচ্ছিলেন বলে দাবি করেছেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি জিলাল হোসেইন।
ব্রুনেই লেবর উইং-এর ফেসবুক পেইজেও দেখা যায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের কাজ দেয়ার নামে যে দালাল চক্র বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় তাদেরই এক সদস্যের প্রতি উদ্ধত হয়েছিল শ্রমিকরা।
কিন্তু প্রশ্ন রাখা হয় একটি দূতাবাসের ভেতরে এ ধরণের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয়া হল কেন।
এ ব্যাপারে মি. হোসেইন জানান, দূতাবাসে এ ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা তারাও প্রত্যাশা করেন না।
“ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। যেটুকু জানি যে, আমাদের কোন কর্মকর্তা কারও গায়ে হাত তোলেনি। যারা পিটিয়েছে তারা হল ক্ষুব্ধ শ্রমিক। কারণ তারা এই দালালদের মাধ্যমে এসেও দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে কোন কাজ পাচ্ছেনা।”
ব্রুনেই সরকারকে এই দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেও কোন ফল যায়নি বলে তিনি জানান।
“আমরা এই শ্রমিকদের মতোই হেল্পলেস। আমাদের এখানে ম্যাজিটেরিয়াল পাওয়ার আছে, পুলিশি পাওয়ার নেই। আমরা শুধু এই দেশের সরকারকে রেফার করতে পারবো। দালালদের চিহ্নিত করে দিতে পারবো। অনেক সুপারিশও করেছি। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।”
মধ্যপ্রাচ্যে নির্মাণ শ্রমিকদের একটি বড় অংশই বাংলাদেশি।
কী বলছে সরকার?
ব্রুনেইয়ের এই ঘটনাটিকে নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা গতকাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন।
বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলেও বিবিসি বাংলাকে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান ।
শ্রমিকরা দূতাবাসে যে নিগ্রহের শিকার হন সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বৈঠকে আলোচনা করার কথাও জানান তিনি।
যেখানে দূতাবাসের কাজ প্রবাসীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া, সেখানে তাদের কার্যক্রম এবং আচার আচরণ কতোটা নজরদারি করা হয়।
এ বিষয়ে মি. খান বলেন, “বাংলাদেশের দূতাবাসে যে সরকারি কর্মকর্তারা কাজ করেন, তারা যেই মন্ত্রণালয়েরই হোক না কেন, প্রবাসীদের যথাযথ সাহায্য করাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। কেউ যদি এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে থাকে। তাহলে অবশ্যই এর তদন্ত হবে এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
প্রতিটি দূতাবাসের সেবা আরও জোরদার করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় প্রবাসীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।