কানাডা-বাংলাদেশ বাণিজ্য ফোরামে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে: টিপু মুনশি
লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
কানাডা সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কানাডা-বাংলাদেশ বাণিজ্য ফোরাম উভয় দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈকিত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।
গতকাল কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এবং অন্টারিও চেম্বার অব কমার্সের(ওসিসি) যৌথ আয়োজনে প্রথমবারের মত “বাংলাদেশ-কানাডা বাণিজ্য ফোরাম-২০১৯” এর সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
টিপু মুনশি এসময় বলেন, কানাডা-বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের এ ফোরাম উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। তারা একে অপরের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবেন এবং সুবিধা জনক খাতে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে পারবেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি স্পেশাল ইকনোমিক জোন গড়ে তুলছে। এগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। কানাডার বিনিয়োগকারীগণ এখানে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন।
বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে জানিয়ে তিনি বলেন, কানাডার ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে এগিয়ে এলে এ সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ১০% জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দ্বারপ্রান্তে।
টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশের সাথে কানাডার এখন মোট বাণিজ্য প্রায় ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরমধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করে ১ হাজার ৩৩৯.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুল্যের পণ্য এবং আমদানি করে ৫৮৯.২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুল্যের পণ্য।
কানাডা বাংলাদেশকে ২০০৩ সালে থেকে পোলট্রি, ডেইরি, ডিম, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যতীত সকল পণ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবার পরও কানাডা শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে বলে বাংলাদেশ আশা করে। উভয় দেশের ব্যবসায়ীগণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে কানাডায় বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য ও বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ছে।
বাংলাদেশের সাথে কানাডার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে এ ফোরাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির উপস্থিতিতে এসময় এফবিসিসিআই এবং ওসিসি-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এফবিসিসিআই এর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং ওসিসি-এর সভাপতি রকো রসি নিজ নিজ চেম্বারের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
বাণিজ্য ফোরামে প্রথম প্যানেলের আলোচ্য বিষয় ছিল- ‘কিভাবে কানাডা বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করতে পারে’। বিষয়ের উপর বাংলাদেশ সফটওয়্যার এবং তথ্য সেবা সংগঠনের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ সাদাত আলমাস কবির আলোচনা করেন।
ফোরামের অতিথি অন্টারিও প্রদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যমন্ত্রী ভিক্টর ফেডালি বাংরাদেশের সাথে কানাডার বাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা উদার অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করবে।
উল্লেখ্য, বৈশি^ক সরবরাহ সংযোগ, উচ্চ মূল্যের পোশাক সামগ্রী, হাল্কা প্রযুক্তি পণ্য, ঔষধ সামগ্রী, ডিজিটাল সেবা, পাট পণ্যের শিল্প ভিত্তিক ব্যবহার, সামদ্রিক মৎস্য, হিমায়িত খাদ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ, উচ্চ শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি খাতে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, টরন্টোতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নাঈম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খোরশেদ ওয়াহাব, অন্টারিও চেম্বারের সহ-সভাপতি লুই ডিপামাসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যগণ ফোরামের বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন।
ফোরামে কানাডার বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীবৃন্দ, কানাডার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, শিল্পপতি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীবৃন্দ, কানাডাস্থ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।