সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪০৪৯ জন
হেলথ ডেস্ক /লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আশা ছিল মৌসুমের শেষের দিকে এসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমবে। তবে যে হারে কমার আশা ছিল সে হারে কমছে না। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ৬ দিনেই সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ৪৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন। বর্তমানে ঢাকার চেয়ে বাইরের জেলাগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি।
বছরের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার একেবারেই কম থাকে। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকতে পারে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, জুনে ১ হাজার ৮৮৪ জন, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২৫৩ জন, আগস্টে ৫২ হাজার ৬৩৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে ২০১৯ সালেই সর্বোচ্চ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে আগস্ট মাসে ছিল সর্বোচ্চ।
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরো ৭৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) এ সংখ্যা ছিল ৭৮৮ জন। অর্থাত্ এ সময়ে রোগী বেড়েছে ৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে নতুন ৩২৫ জন ভর্তি হয়েছে এবং ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ৪৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী।
রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬১ জন, মিটফোর্ডে ৫৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৭ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২৬ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ১৪ জন, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ৩ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানা ঢাকায় ১ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩৪ জন ও কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ২ জনসহ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে মোট ২৩৫ জন ভর্তি রয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ৯০ জন।
ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগে ১০১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৯ জন, খুলনায় ১৪১ জন, রংপুরে ৮ জন, রাজশাহীতে ৪৬ জন, বরিশালে ৫৭ জন, সিলেটে ৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিত্সা নিয়েছেন ৭৫ হাজার ১৪৬ জন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নেওয়ার পর বাসায় ফিরেছেন ৭১ হাজার ৬১৭ জন। আক্রান্তদের ৯৬ ভাগ রোগীই ছাড়পত্র পেয়েছেন।
এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১৯২ জন রোগীর তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ৯৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ৫৭টি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু বলে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। এ সংখ্যা এখনো সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মৃত ৫৭ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে এপ্রিলে ২, জুনে ৫, জুলাইয়ে ২৮ এবং আগস্ট মাসে ২২ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে এবার ডেঙ্গুতে শিশু মৃত্যুর হারও সর্বোচ্চ। আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মৃত্যু ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। যাদের মধ্যে ১২ জনের বয়স ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। যা মোট মৃত্যুর ২৩ দশমিক ১ ভাগ।
আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গু জ্বরে মারা যাওয়া ৫৭ জনের মধ্যে ৩৮ জনের ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম এবং ৬ জনের হেমোরেজিক জ্বর ছিল। ২২ জনের মধ্যে এর আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া মৃতদের মধ্যে ২১ জনের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেবরিনা ফ্লোরা বলেন, আমাদের একটি ‘ডেঙ্গু ডেথ রিভিউ’ কমিটি মূলত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কারা মারা গেছে তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। এই কমিটিতে দেশের মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক্স, ইপিডেমিওলোজি ও ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞরা আছেন। এ কমিটিই মূলত সন্দেহজনক ডেঙ্গুজনিত রোগের কারণে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করে। পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগের গতি-প্রকৃতি, চিকিৎসা ও সংশ্লিষ্ট সব বিশ্লেষণ করে থাকে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবু সাঈদ (৩০) নামে একজন মারা গেছেন। শুক্রবার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। আবু সাঈদ বৃহস্পতিবার রাতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার অবস্থা ‘গুরুতর’ ছিল। দ্রুত তাকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই গতকাল বিকালে তার মৃত্যু হয়। আবু সাঈদ টাঙ্গাইলের মোহাম্মদ ছালামের ছেলে। নগরীর আছদগঞ্জের একটি কারখানার ফোরম্যান ছিলেন তিনি।