আয়কর বিবরণীর ভুল তথ্য উদঘাটনে প্রযুক্তির সাহায্য নেবে এনবিআর
সাইদুর রনি /লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর
আয়কর বিবরণীর ভুল তথ্য উদঘাটনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবার প্রযুক্তির সাহায্য নেবে। এ লক্ষে করাঞ্চল-১০ ‘রিটার্ন প্রসেসিং টুলস’ নামে একটি টুলস উদ্ভাবন করেছে। কোনো করদাতা যদি তার আয়কর বিবরণীতে ভুল তথ্য প্রদান অথবা আয়কর হিসাবে গরমিল দেখান, তাহলে এর সাহায্য সহজে সেটা যাচাই করা সম্ভব হবে।
ইতোমধ্যে করাঞ্চল-১০ এই টুলস ব্যবহার করে ৬০ হাজার আয়কর বিবরণী যাচাই করেছে, যেখানে বিপুলসংখ্যক বিবরণীতে ভুল তথ্য ও কর হিসাবের গরমিল উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। এখন অন্যান্য করাঞ্চলেও এই টুলস ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।
এ বিষয়ে এনবিআরের প্রধান উদ্ভাবনী কর্মকর্তা ও সংস্থাটির সদস্য কানন কুমার রায় সম্প্রতি বলেন, কোন কোন করদাতা আয়কর বিবরণীতে জেনে-বুঝে তথ্য ভুল দেন।
আবার কোন করদাতা যেসব খাতে কর প্রযোজ্য হবে তা ভুলবশত রেয়াত হিসেবে দেখায় কিংবা কর হিসেবে গরমিল করেন। করদাতা আয়করকে রেয়াত হিসেবে দেখালে কিংবা কর হিসেবে গরমিল করলে ‘রিটার্ন প্রসেসিং টুলস’ সেটা যাচাই করবে।
তিনি বলেন, যেহেতু প্রযুক্তির সাহায্য সহজেই করদাতার দাখিল করা বিবরণী যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া ম্যানুয়ালি সব আয়কর বিবরণী যাচাই করা সম্ভব নয়। তাই করাঞ্চল-১০ ছাড়াও অন্যান্য করাঞ্চলে এই টুলস ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিগগিরই সব করাঞ্চলকে এই টুলস ব্যবহার করার নির্দেশনা দেয়া হবে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট এনবিআরে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উদ্ভাবন পরিকল্পনার প্রথম সভায় এ টুলস প্রতিটি করাঞ্চলে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়।
কানন কুমার বলেন, গত করবর্ষে কর অঞ্চল-১০ প্রায় ৬০ হাজার করদাতার আয়কর বিবরণীর তথ্য যাচাই করা করে। এতে বিপুল পরিমাণ করফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন ও কর আদায় হয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একটি কর বিবরণী যাচাই করে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকার কর কম দেখানো হয়েছে, যা টুলসে ধরা পড়েছে। সেই ব্যক্তি আয় আর সম্পদ দেখালেও ইচ্ছাকৃতভাবে কর দেখাননি। পরে চিঠি দেয়ার পর তিনি কর পরিশোধ করেন। তিনি বলেন, যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনেক করদাতা যেসব খাতে কর অব্যাহতি নেই সেসব খাতে অব্যাহতি দেখাচ্ছেন। আবার অনেকে জেনে-বুঝে করযোগ্য আয় ও সম্পদ দেখালেও কর দেয়নি। অনেকেই ভুলবশত করযোগ্য আয়কে অব্যাহতি দেখিয়েছেন- এমন অসংখ্য কর বিবরণী পাওয়া যায়।
তিনি জানান, এই টুলসের মাধ্যমে কর বিবরণীতে দেয়া করদাতার আয়, ব্যয়, সম্পদের তথ্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিভাবে কর হিসাব হয়ে যাবে। কর হিসাবে কোনো ভুল তথ্য থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তা ধরিয়ে দেবে।
উল্লেখ্য, একজন করদাতা জীবন বিমার প্রিমিয়াম, সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তা ও করদাতার চাঁদা, কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা, সুপার এনুয়েশন ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদা, যে কোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ, বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ, বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পেয়ে থাকেন।
কিন্তু অনেক করদাতা কর বিবরণীতে যে পরিমাণ কর রেয়াত পাবেন তার চেয়ে অতিরিক্ত দেখিয়ে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেন