পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে ব্যাংকগুলোকে ‘বিশেষ’ সুবিধা
স্টাফ রিপোর্টার/লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে ব্যাংকগুলোকে আরও বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
বিনিয়োগের সুবিধা নিতে কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন,“এই সিদ্ধান্ত অর্থনীতিতে তারল্য বাড়াবে এবং এর ফলে পুঁজিবাজরে ইতিবাচক প্রভাব আসবে।”
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী।
ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন,“এটা পুঁজিবাজারের জন্য একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এর ফলে ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ল; বাজারে তারল্য বাড়ার সম্ভাবনা তৈরী হল।”
সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে ‘পুঁজিবাজারে সাময়িক তারল্য সুবিধা প্রদান’ শীর্ষক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকের অগ্রিম ও আমানতের অনুপাত নির্ধারিত মাত্রা অপেক্ষা কম এবং বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআর (স্টেটিউটরি লিক্যুইডিটি রেশিও) সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।
এসব ব্যাংকের জন্য আইনি সীমার মধ্যে থেকে পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তিক শেয়ারে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যাংকগুলোর এমন বিনিয়োগে অংশগ্রহণ (নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারী কোম্পানিতে ঋণ প্রদান করে উক্ত কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওর আকার বৃদ্ধির মাধ্যমে পরোক্ষ বিনিয়োগ) পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি গতিশীল পুঁজিবাজার নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারী কোম্পানিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নয়টি শর্তে সাময়িক তারল্য সুবিধা প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছেঃ
যে সব ব্যাংক তারল্য সুবিধা গ্রহণেচ্ছুক সেক্ষেত্রে সলো ও কনসোলিডেটেড উভয় ভিত্তিতে পুঁজিবাজার বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সার্কুলারে বর্ণিত সর্বোচ্চ সীমার (সলো ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ২৫ শতাংশ এবং কনসোলিডেটেড ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ৫০ শতাংশ) কম হতে হবে। তারল্য সুবিধা গ্রহণের পরও এই বিনিয়োগ সীমা পরিপালন করতে হবে। এই সুবিধার অধীনে প্রাপ্ত তারল্য শুধুমাত্র ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারী কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট সাবসিডিয়ারী কোম্পানিকে ঋণ হিসেবে প্রদান করা যাবে।
প্রাপ্ত তারল্য ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বা সাবসিডিয়ারী কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের জন্য নতুনভাবে পৃথক বিও একাউন্ট খুলতে হবে।
ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য হতে ট্রেজারী বন্ড বা বিল রেপোর মাধ্যমে এই তারল্য সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। ট্রেজারী বন্ড বা বিলের রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন হিসেবে রেখে তারল্য সুবিধা প্রদেয় হবে। নগদে রেপোর অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য আদায়যোগ্য অর্থ অপেক্ষা কম হলে তা ইতোপূর্বে গৃহীত মার্জিন হতে সমন্বয় করা হবে এবং সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে ব্যাংক তা প্রদান করতে বাধ্য থাকবে।
প্রাথমিকভাবে রেপোর মেয়াদ ২৮ দিন হলেও তহবিল ব্যবহারের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে তা সর্বোচ্চ ছয়) মাস পর্যন্ত ঘূর্ণায়মাণ রাখা যাবে। এরূপ রেপোর জন্য কোন অকশনের প্রয়োজন হবে না এবং সুদের হার হবে ৬ শতাংশ।
তারল্য সুবিধা গ্রহণের জন্য যাচিত অর্থের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন এবং এ উদ্দেশ্যে সদ্য খোলা বিও হিসাবের প্রমাণপত্রসহ মহাব্যবস্থাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন করতে হবে। প্রদানযোগ্য তারল্য সুবিধার পরিমাণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং পুনঃবিবেচনার জন্য কোন আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
মেয়াদোত্তীর্ণ রেপো নবায়নের প্রয়োজন হলে তহবিল ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টের হিসাবসহ মহাব্যবস্থাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পাঁচ কার্যদিবস পূর্বে আবেদন করতে হবে। সার্কুলার জারির তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন করতে হবে।
উল্লেখিত বিষয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত সংশ্লিষ্ট আইন এবং সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত অন্যান্য নির্দেশনার পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।