আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রক্ষা করতে চায়

স্টাফ রিপোর্টার/লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর:

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান এমপি জানান, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে সরকারের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো অ্যাকটিভ ও কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। সরকার সেটাই করছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে গণতন্ত্র, সুশাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রক্ষা করতে চায়।

বাংলাদেশে অবৈধ মুজিবনগর কর্মচারী, ভূয়া মুক্তযোদ্ধা, অনৈতিক ভাবে রাষ্টীয় সম্পদ আহরণ,    চাঁদাবাজি,  টেন্ডারবাজির মতো দুর্নীতিবিরোধী অভিযান এখন যেন ঘুরপাক খাচ্ছে স্পোর্টস ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনো বা ম্যাসাজ পার্লার বন্ধ করার মাঝেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তার দলের ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতাদের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেয়া এবং কয়েকজনকে পদচ্যুত করার পর পুলিশের সেই অভিযান শুরু হয়।

কিন্তু সমালোচকরা এই অভিযান নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। কেবল ক্যাসিনো আর ম্যাসাজ পার্লারের মতো ব্যবসাকে টার্গেট করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের বড় বড় দুর্নীতির ঘটনাকে আসলে আড়াল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। যদিও এই অভিযানকে সামাজিক নানা অপরাধ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কিন্তু তা চালানো হচ্ছে মূলত ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার বিরুদ্ধে।

পুলিশ-র‍্যাবের চলমান অভিযানে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা এবং টেন্ডারবাজির অভিযোগে যুবলীগের দু’জন নেতাকে গ্রেফতারের কয়েকেদিন পর আজ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। অবৈধ জুয়া বা ক্যাসিনোর সাথে জড়িতদের কেউ যেন তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ওঠাতে না পারে, কর্তৃপক্ষ ব্যাংকগুলোকে সেই নির্দেশ দিয়েছে। সর্বশেষ এই অভিযানে সোমবার ঢাকায় একটি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়।

প্রশ্ন উঠছে যে সরকার কি টার্গেটের বাইরে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাচ্ছে এই অভিযানকে? সরকার অবশ্য তা মানতে রাজি নয়।

দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় টার্গেট নিয়ে অভিযান চালানোর কথা বলে তা ক্লাবগুলোর মধ্যে ছোট পরিসরে চালানো হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী যখন এতদিন পরে অন্তত এটা দেখতে এবং দেখাতে রাজি হয়েছেন, সেই জায়গা থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে আরও গভীরে যাওয়া উচিত” – বলেন সুলতানা কামাল।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতার দুর্নীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা নিয়ে তাদের দলের সভানেত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরই অভিযান চালানো হচ্ছে, সেজন্য ধীরগতি মনে হতে পারে।

“অভিযান শুরু হলো কেবল যার এক সপ্তাহ হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে সব ব্যবস্থা হবে, এটা কি সম্ভব? সব কিছু যাচাই-বাছাই করে করা হবে।”

“যারা গ্রেফতার হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তারা কি কম অপরাধী? কাজেই শুরু হয়েছে,কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কিছু বিষয় আছে, যেগুলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাচাই করছে। অনেকে তো গা-ঢাকাও দিয়েছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তবে কেউ ছাড় পাবে না।”

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, এই অভিযান শুধু তাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নয়। সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলবে।

দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর ভূমিকা নিয়েও বিশ্লেষকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী আওয়ামী লীগেও এমন আলোচনা হচ্ছে।

একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী বলেছেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির সাথে জড়িত যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে এবার ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *