প্রশ্ন তোলার পর ব্যয় অর্ধেকে নামিয়ে এনে নতুন প্রস্তাব
শাহ্ সাকিব/লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সাড়ে ৩ হাজার কোটি ব্যয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো, যা নিয়ে খোদ পরিকল্পনামন্ত্রীও প্রশ্ন তোলার পর ব্যয় অর্ধেকে নামিয়ে এনে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এখন এক হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), যা মঙ্গলবার একনেক সভায় উঠতে যাচ্ছে।
২০১১ সালের অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জনশুমারিতে ব্যয় হয়েছিল ২৩৭ কোটি টাকা। ১০ বছর পরপর ধারাবাহিকভাবে এই শুমারি করার কথা।
২০২১ সালের প্রকল্পের জন্য ১৫গুণ বেশি অর্থ ব্যয় অনুমোদনের প্রস্তাব গত জুলাইয়ে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় বিবিএস পাঠানোর পর শুরু হয় আলোচনা।
২৩৭ কোটি টাকা থেকে এ লাফে ব্যয় বেড়ে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেখে ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন।
এটা শুনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ১০ বছরে কোনো প্রকল্পের ব্যয় ১০-১৫ গুণ বেড়ে যাওয়া কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
এর পরের মাসে বিবিএস প্রকল্পটির ব্যয় ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আবার প্রস্তাব পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনে, তাতেও আপত্তি জানিয়ে আবারও ফেরত পাঠানো হয়।
এরপর বিবিএস প্রকল্পটির ব্যয় আরও কমিয়ে ১ হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় নামিয়ে প্রস্তাব আনে, এবার তাতে সায় দেয় পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভা।
পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার একনেক সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে।
ব্যয় কীভাবে কমল- জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক ও বিবিএস জনশুমারি উইংয়ের পরিচালক জাহিদুল হক সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই দফায় প্রকল্পটির বেশ কিছু খাতে কাটছাঁট করার কারণেই ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে সুপারভাইজার ও গণনাকারীদের সম্মানী কমিয়ে ব্যয় কমানো হয়েছে।”
সুপারভাইজার ও গণনাকারীর সম্মানী ১১ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জাহিদুল একইসঙ্গে বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের পরও সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রস্তাবে দেখা যায়, পুনর্গঠিত ডিপিপিতে জেলায় পর্যায়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ভেন্যু, মাল্টিমিডিয়া এবং যানবাহন ভাড়া বাবদ ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা করা হয়েছে। ৭৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২৬ কোটি টাকা করা হয়েছে বিজ্ঞাপন ব্যয়।
ভ্রমণ ব্যয় ৪২ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। ম্যাপিং খাতে ব্যয় ৫৮ কোটি থেকে কমিয়ে ২৮ কোটি টাকা করা হয়েছে।
টেলেক্স, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট খাতে ব্যয় ১৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ১৮৮ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৪৭ কোটি টাকা হয়েছে। মুদ্রণ ও বাঁধাই ব্যয় ৩৩৯ কোটি টাকা থেকে ১৩৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
এছাড়াও টেলিফোন, আপ্যায়ন, যানবাহন এবং জ্বালানি ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমিয়ে প্রকল্পের ব্যয় পুনর্গঠন করা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর প্রথম বাংলাদেশে গৃহগণনা হয় ১৯৭৩ সালে এবং প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৮১ সালে আদমশুমারি ও গৃহগণনা একত্রে পরিচালনা করা হয়। পরবর্তীতে তৃতীয় ও চতুর্থ এবং পঞ্চম আদম শুমারি ও গৃহগণনা একসঙ্গে হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৩ সালের পরিসংখ্যান আইন পরিবর্তন করে আদম শুমারি ও গৃহগণনার নাম পরিবর্তন করে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ করা হয়।