সুযোগ ও সামর্থ্যের সমন্বয়ের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে– স্পীকার
মোহাম্মদ নাইম/লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেছেন, অসমতা ও বৈষম্য দূর করে নারীদেরকে উন্নয়নের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের পিছিয়ে রেখে প্রকৃত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন সম্ভব নয়। সুযোগ ও সামর্থ্যের সমন্বয়ের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দারিদ্রের দুষ্ট বৃত্ত থেকে বের করে আনতে হবে নারীদের। তবেই, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সাধিত হওয়ার পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ এর প্রতিশ্রুত স্লোগান ‘কেউ পিছিয়ে থাকবে না’ এই লক্ষ্য পূরণ হবে।
তিনি আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসস্থ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এ অনুষ্ঠিত “হিউম্যান এমপাওয়ারম্যান্ট এন্ড এটেইনিং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ইন বাংলাদেশ: দ্যা কেইসেস অব উইমেন এন্ড মার্জিনাল কমিউনিটি” শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন।
স্পীকার বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে নব প্রজন্মের শিক্ষার্থীরাই পরিবর্তনের রূপকার। জনগণের জীবনমানের পরিবর্তন আনয়নে নতুন প্রজন্মকে তাদের সৃজনশীল মেধা ও জ্ঞানকে কজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি। আজকের মেধাবী যুবশক্তি সমাজে বয়ে আনতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন। কেননা, তারাই ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিবে। বিশ্বের যে কোন ঘটনা এখন আর ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ নয়। তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে যে কোন ঘটনাই সীমান্তের সীমা ছাড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুঁয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, শরনার্থী সমস্যা, বৈষম্য ও অসমতা- এ সকল বিষয় এখন বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ সকল সমস্যা মোকাবেলায় প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্মিলিত প্রয়াস। এক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মকে মেধার স্বাক্ষর রাখতে হবে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সকল সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন সুদৃঢ়। বিগত দশ বছরে দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ হতে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সকল অর্জন সম্ভব হয়েছে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের কারণে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিশ্চিত করা হয়েছে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ নানা সুবিধা। বর্তমানে জিডিপি ৮ শতাংশ- যা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠার পূর্বাভাস।
তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও এসডিজি লক্ষ্য পূরণে বর্তমান সরকার জেন্ডার রেসপন্সিভ বাজেট প্রণয়ন করছে। এছাড়া, সংসদ সদস্যগণ নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নারী ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। নারী ও অতিদরিদ্র সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে খাতভিত্তিক পৃথক পৃথক বরাদ্দ রয়েছে বর্তমান বাজেটে। নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাতৃস্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, শিশুপুষ্টির কেন্দ্রই হল গর্ভবতী মা। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত না হলে সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশু জন্মগ্রহণ অনিশ্চিত থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে ও খাদ্য নিরাপত্তায় নারীর অবদান ৭০ ভাগ। গৃহস্থলী কর্ম থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণে রয়েছে নারীর অসামান্য ভূমিকা। নারীর এ অবদানকে যথাযথ সম্মান দিলেই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সুরক্ষিত হবে। এসডিজি লক্ষ্য পূরণের মধ্য দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মেধা, জ্ঞান ও সৃজনশীলতা চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে উল্লেখ করে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উপাচার্য মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী ও উপ-উপাচার্য এম আবুল কাসেম মজুমদার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।