কৃষি জমির ওপর কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান নয় : প্রধানমন্ত্রী

গোলাম রব্বানী /লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

বাংলাদেশের উন্নয়ন এখনও অনেকাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবাদী জমির ক্ষতিসাধন করে যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না তোলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য শিল্পায়নে যাব। কিন্তু কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়। কেননা, আমাদের দেশের উন্নয়ন এখনও অনেকাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল।’
তিনি বলেন, ‘তিন ফসলী জমিতেতো ইন্ডাস্ট্রি করতেই পারবে না। আর যদি এক ফসলী জমি, যেখানে চাষ হয় না সেখানে হবে। তবে, যত্রতত্র করতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ কৃষকলীগের ১০ জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তাঁর সরকারের একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটার অর্থ হলো আমাদের কোন কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয়। যেখানে সেখানে যত্রতত্র এটা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে, এটা কেউ করতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে চায় তাঁদেরকে ঐ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং সব ধরনের সার্ভিস সেখানে দেওয়া হবে। কাজেই তাঁরা সেখানে শিল্প গড়ে তুলবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। কারণ, ১৬ কোটির ওপর মানুষকে আমাদের খাবার দিতে হবে। অবশ্য আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় এখন পুষ্টির দিকে নজর দিয়েছি। ডিম, মাংস, মিঠা পানির মাছ, তরিতরকারি এবং ধান উৎপাদনে তাঁর সরকারের সাফল্যও এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তাঁর সরকারের ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ কর্মসূচির উল্লেখ করে যার যার বাড়িকে তার তার খামারে পরিণত করার আহবান জানান শেখ হাসিনা ।
তিনি বলেন, ‘কেউ বসে থাকবে কেন, সবাই কাজ করবে। যে যেভাবে উৎপাদন করতে চায়, যা উৎপাদন করতে চায়। আমরা সেই সুযোগটা দেব এক টুকরো জমিও অনাবাদী থাকবে না।’
‘অনাচে, কানাচে, ঘরের পাশে, জলা, ডোবা যাই থাকুক এমনকি ছাদের ওপরে পর্যন্ত যেন চাষ হয় এবং ফসল উৎপাদন হয় এবং কৃষকরা ভিটেবাড়িতেও যেন ফসল উৎপাদন করতে পারে সেজন্য আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পটি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি’, যোগ করেন তিনি।

এ সময় তাঁর সরকারের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দেওয়ায় তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী উৎপাদিত পণ্য সমবায়ের মাধ্যমে বাজারজাতকরণের উদ্যোগর উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
অন্যান্যের মধ্যে-বাংলাদেশ কৃষক লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজা এবং সহ-সভাপতি শরিফ আশরাফ হোসেন বক্তৃতা করেন।
কৃষকলীগের যুগ্ম সম্পাদক সমির চন্দ্রের সঞ্চালনায় সর্ব ভারতীয় কিষাণ সভা’র সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন ও বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
আলোচনা পর্বের আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা, স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

তাঁর সরকার গবেষণার জন্য বাজেট বরাদ্দসহ গবেষণায় অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ফসল বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে ১০৮ ধরনের উচ্চফলনশীল ধানের জাত আবিষ্কার করেছি। লবণাক্ততা সহিষ্ণু, ক্ষরা সহিষ্ণু এবং বন্যার পানি সহিষ্ণু ধান এবং কৃষিকে যান্ত্রিকিকরণের অংশ হিসেবে ৪৪২ ধরনের কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছি।’

তিনি আক্ষেপ করেন, একটু সমস্যা রয়েছে, আমাদের যারা লেখাপড়া শেখে তাদের মধ্যে অনেকেই কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও লেখাপড়া শিখে আর মাঠে যেতে চায় না।
তিনি বলেন, যে বাবা কৃষি কাজ করে তাঁকে লেখাপড়া শিখিয়েছে তখন সেই বাবারই ছেলেকে নিয়ে মাঠে যাওয়া উচিত। অথচ দুই পাতা লেখাপড়া শিখেই তারা মনে করে আমি কেন মাঠে যাব। আমার মনে হয়, ঐ ছেলেটা থেকে আমাদের দূরে থাকার দরকার।

প্রধানমন্ত্রী এবার ধানকাটার মওসুমে ছাত্রলীগকে মাঠে গিয়ে ধান কাটার কাজে কৃষকদের সহায়তার আহ্বান জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে বলেন, ‘এতে লজ্জার কিছু নেই। নিজের কাজ নিজে করায় লজ্জার কিছু থাকে না।’ ‘নিজের ফসল নিজে উৎপাদন করবো। নিজের খাবার নিজে খাব। এতে লজ্জার কি আছে,’ বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমিও আমার (গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার) কৃষকদের বলে দিয়েছি তোমরা যখন বীজ রোপণ করবা আমাকে খবর দিও প্রয়োজনে আমিও যাব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই জায়গাটায় আমাদের কৃষকলীগের একটা ভূমিকা থাকা দরকার এবং আমি মনে করি, আমাদের স্কুল জীবন থেকেই এটা অভ্যাস থাকা দরকার। কেননা, জমি চাষ করা, নিজের ফসল নিজে ঘরে তোলাটা একটা গর্বের বিষয়। এটাকে সেভাবেই দেখতে হবে এবং মর্যাদা দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কৃষি কাজকে মর্যাদা না দিলে পেটের ভাত বা খাবার আসবে কোথা থেকে। সেকথাটাও ভাবতে হবে।’ সরকারের উদ্যোগে মৎস, চিংড়ি, ভুট্টা এবং বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এজন্য এখন বারো মাসই সকল প্রকার সবজি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যা অতীতে কেবল শীতকালেই পাওয়া যেত।

দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার এবং ইন্টারনেট সেবাকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর সরকার ডিজিটাল কৃষির প্রবর্তণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাড়ে ৩ হাজার ইউনিয়নে আমরা পৌঁছে গেছি এবং ইনশাল্লাহ অচিরেই আমাদের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে যাবে।’

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১ উৎক্ষেপণ, ই-কৃষি চালু, কৃষকদের জন্য কল সেন্টার চালু, ৪৯৯টি কৃষি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন এবং সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি।

তাঁর সরকারের মোবাইল ফোনকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক স্বল্পমূল্যে কৃষকরা মোবাইল ফোন ক্রয় করে সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা নিতে পারছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *