গৃহকর্মীদের সমস্যার বিষয়টি নিয়ে সরকারও চিন্তিত
স্টাফ রিপোর্টার/লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
স্বাধীন বাংলাদেশের মর্যাদা ও নারীদের সম্ভ্রম রক্ষা করতে না পারলে প্রয়োজনে সৌদিআরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে।
মঙ্গলবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে তিনজন সংসদ সদস্য এই দাবি জানান। এ সময় সৌদিআরবে নারী গৃহকর্মীদের শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে প্রশ্নকারী এমপিদের সমালোচনার মুখে পড়েন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, সৌদিআরবে নারী গৃহকর্মীদের সমস্যার বিষয়টি নিয়ে সরকারও চিন্তিত। তাদের প্রশিক্ষণসহ নানা সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর একেবারেই সম্ভব না হলে তখন নারী কর্মী না পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
সম্পূরক প্রশ্নে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বলা হচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে কর্মী পাঠায়। তাহলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটা কী? মা-বোনদের আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওখান থেকে যৌন নির্যাতনসহ নানারকম অন্যায়-অত্যাচারের শিকার হয়ে অবশেষে লাশ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। তাদের সবারই পোস্টমর্টেমে লেখা থাকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’। সবই একরকম রিপোর্ট। এটা তারা (সৌদিআরব) করে। ওখানে পোস্টমর্টেম যে হয়, সেটাও বাংলাদেশ দূতাবাস দেখে না। মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেয় না। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো পাঠিয়েই খালাস।
ফিরোজ রশীদ বলেন, এভাবে আমাদের মা-বোনদের নিয়ে কি ব্যবসা করতে পারি? স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের সম্মান আছে, ইজ্জত আছে। আমরা তো এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নই। কেন কয়েকটি টাকার জন্য তাদের পাঠাতে হবে? অবিলম্বে এটা বন্ধ করতে হবে।
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর উদ্দেশে ফিরোজ রশীদ বলেন, একেকজন নারী ফেরত আসে, আপনি (মন্ত্রী) দেখেন না তাদের ওপর কী অন্যায়-অত্যাচার করা হয়? আমাদের ঘরে মা-বোন নেই? কেন কয়েকটি টাকার জন্য তাদের পাঠাব? আইন সংশোধন করে নারীদের সৌদিআরবে যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। আমাদের দূতাবাস কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
মন্ত্রী কোনো খবর রাখেন না। পাঠিয়েছে দালালেরা, আর উনি (মন্ত্রী) খালাস। দালালেরা নিয়ে তাদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। বেচাকেনা হচ্ছে দস্তুরমতো। মেয়েদের হাট বসে, কে কত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যাবেন। আমরা কেন এটার খবর রাখি না? স্পষ্টভাবে জানতে চাই, এটা অবিলম্বে বন্ধ হবে কি-না। মা-বোনদের পাঠিয়ে দেশ বিক্রির টাকা আমাদের দরকার নেই। বন্ধ করবেন কি-না?
জবাবে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয় কিছু করে না- এটা মাঠের বক্তৃতার মতো। গত কয়েক মাসে ১৬০টি ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত, তিনটি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। দোষীদের জরিমানা করা হয়েছে। সরকার জিরো টলারেন্সে আছে।
তিনি বলেন, আমরা আইন করে দিচ্ছি, যারা বিদেশ পাঠাবে, সৌদি আরবে ওদের কাউন্টার পার্ট রিক্রুটিং এজেন্সির সম্পূর্ণ ডিটেইলস আমাদের দিতে হবে, যাতে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি।
এর আগে জাপার মুজিবুল হক চুন্নু সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন করা হয়। বহির্বিশ্বে নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে নানা প্রশ্ন আসছে। তিনি নারী কর্মীদের যৌন নির্যাতন বন্ধ করে ইজ্জতসম্মান নিয়ে চাকরিসহ বেতন নিশ্চিত করার পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চান।
জবাবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, গৃহকর্মীর বিষয়ে জাপার চেয়ে বেশি চিন্তিত সরকার। এ ব্যাপারে অনেক পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।
কয়েকদিন আগে ঢাকাস্থ সৌদি আরব দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সৌদি আরবে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এগুলো তোলার জন্য। ২৬ থেকে ২৭ নভেম্বর সৌদিআরবে জয়েন্ট টেকনিক্যাল গ্রুপের বৈঠকেও এই প্রশ্নগুলো তোলা হবে।
মন্ত্রী বলেন, নারী কর্মীদের কোনো ব্রিফিং, প্রশিক্ষণ না দিয়ে পাঠানো হয়, সেটা দেখতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, গৃহকর্মী পাঠাতে হলে ন্যূনতম এক মাসের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাসহ তাদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়ে অবহিত করার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি এই সমস্যার সমাধান হবে।